ব্রিটিশ ভারতে সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার | Social and religious reforms in British Period

ব্রিটিশ ভারতে সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার | Social and religious reforms in British Period

ব্রাহ্মসমাজ : ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমােহন কলকাতায় ব্রহ্ম সভা স্থাপন করেন। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মসভার নাম হয় ব্রাহ্মসমাজ।

রাজা রামমােহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩) : তিনি ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার রাধানগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে বলা হয় ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে মারা যান। তাঁকে ‘রাজা’ উপাধি দেন মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে রামমােহন রায় কলকাতায় আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন, পরবর্তীকালে এর নাম হয় ব্রাহ্মসমাজ। ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি লেখেন দ্য প্রিসেন্ট অফ জেসাস, দ্য গাইড টু পিস অ্যান্ড হ্যাপিনেস। তিনি ছিলেন একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী। ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইউনিটারিয়ান মিশন ও বেদান্ত কলেজ স্থাপন করেন। ১৮২৮খ্রিস্টাব্দের ২০ আগষ্ট ব্রাহ্মসমাজের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তারাচাদ চক্রবর্তী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের প্রথম সেক্রেটারী। রামমােহন রায় ‘রামদাস’ ছদ্মনামে লিখতেন। মেরী কার্পেন্টার ছিলেন তাঁর জীবনীকার।

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫) : ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি তত্ত্ববােধিনী সভা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে তিনি তত্ত্ববােধিনী স্কুল স্থাপন করেন। ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে তত্ত্ববােধিনী পত্রিকা প্রকাশ করেন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজে যােগ দেন। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘ব্রাহ্মধর্ম’ বলে একটি গ্রন্থ রচনা করেন।

কেশবচন্দ্র সেন (১৮৩৮-১৮৮৪) : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজে যােগ দেন এবং দেবেন্দ্রনাথের কাছের মানুষ হয়ে যান। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কেশবচন্দ্র সেনকে আচার্য পদে নিয়ােগ করেন। কিন্তু উভয়ের মধ্যে মতবিরােধ ঘটায় ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে আচার্য পদ থেকে বিচ্যুত করেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অধীনে ব্রাহ্মসমাজের নাম হয় আদি ব্রাহ্মসমাজ ও কেশবচন্দ্র সেনের অধীনে ব্রাহ্মসমাজের নাম হয় ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেন সঙ্গত সভা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে তার আন্দোলনের ফলে অসবর্ণ বিবাহ (Inter caste Marriage) চালু হয়। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেন দক্ষিণ ভারতে যান এবং ‘বেদসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে আদি ব্রাহ্মসমাজ ব্রাহ্ম বিবাহ আইনের বিরােধিতা করে। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেন ইন্ডিয়ান রিফর্ম অ্যাসােসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি ইংল্যান্ডে যান রানি ভিক্টোরিয়ার সাথে দেখা করতে। ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে শ্রীধরালু নাইডু দেবসমাজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন দক্ষিণ ভারতের ব্রাহ্মসমাজ। কেশবচন্দ্র সেনের সহযােগিতায় ‘দেশীয় বিবাহ আইন (Native Marriage Act, 1872) পাশ হয়, যেটি সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট নামে বেশি পরিচিত। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে তার নিজ কন্যার সঙ্গে কুচবিহারের মহারাজার বিবাহ দেন উক্ত আইন লঙ্খন করে, সেজন্য ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে আনন্দমােহন বসু ও শিবনাথ শাস্ত্রী কেশবচন্দ্র সেনের ব্রাহ্মসমাজ থেকে বেরিয়ে গিয়ে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ’ স্থাপন করেন। ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেন নববিধান প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে নরসংহিতা নামে একটি নতুন বিধি প্রচলন করেন। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে নববিধান দাশআশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয় অস্পৃশ্যতা দূর করতে। কেশবচন্দ্র সেন ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতায়। সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেগু সংস্কারক বীরেশ লিঙ্গমের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়। প্রতাপচন্দ্র মজুমদার ইংল্যান্ডে ও আমেরিকায় ব্রাহ্মধর্ম প্রচার করেন যথাক্রমে ১৮৭৪ ও ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেনকে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ব্রহ্মানন্দ’ উপাধি দেন। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ‘তিন আইন’ পাশ হয়, যথা বাল্য বিবাহ ও বহু বিবাহ নিষিদ্ধ, এবং অসবর্ণ বিবাহ আইনসিদ্ধ। কেশবচন্দ্র সেন ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

রামকৃষ্ণ মিশন

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব (১৮৩৬-১৮৮৬) : রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের নাম ছিল গদাধর চট্টোপাধ্যায়। হুগলি জেলার কামারপুকুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দিরে একজন পূজারী ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম ছিল সারদা দেবী। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’ বইটি লেখেন মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত। মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত ‘শ্রীম’ নামে পরিচিত ছিলেন ও এই নামে লিখতেন।

স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২) : আসল নাম নরেন্দ্র নাথ দত্ত। ডাকনাম ছিল ‘বিলে। ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়। তিনি প্রথম জীবনে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজে যােগ দেন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি বরানগরে একটি মঠ স্থাপন করেন। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে ক্ষেত্রীর মহারাজা তাকে স্বামী বিবেকানন্দ উপাধি দেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে ১১ সেপ্টেম্বর তিনি বিশ্বধর্ম সম্মেলনে যােগ দেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশে ফেরেন ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। রামকৃষ্ণ মিশনের দুটো প্রধান কেন্দ্র ছিল। একটি পশ্চিমবঙ্গের বেলুড় ও অন্যটি আলমােড়ার মায়াবতী। বিবেকানন্দ ছিলেন সভাপতি ও স্বামী ব্রহ্মানন্দ ছিলেন মঠের প্রধান। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি পুনরায় আমেরিকা যান। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের ধর্মসভায় তিনি বক্তৃতা করেন। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফেরেন ও তাঁর মৃত্যু হয় ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে। তিনি দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেন, ইংরাজিতে মাসিক ‘প্রবুদ্ধভারত’ এবং বাংলায় পাক্ষিক ‘উদ্বোধন’। তার লিখিত গ্রন্থগুলি হল পরিব্রাজক, বর্তমান ভারত, জ্ঞানযােগ, ভক্তিযােগ, রাজযােগ ইত্যাদি। তাকে বলা হয় ভারতের প্রথম সমাজতন্ত্রী।

পরমহংসমন্ডলী : ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে বােম্বাইয়ে পরমহংসমন্ডলী স্থাপন করেন আত্মারাম পান্ডুরঙ্গ। রাম বালকৃষ্ণ জয়াকার ছিলেন পরমহংসমন্ডলীর প্রথম সভাপতি। পুনা, আহম্মেদনগর এবং রত্নগিরিতে এই মন্ডলীর শাখা গড়ে ওঠে। জাতিভেদ প্রথা নিষিদ্ধ করা, মূর্তিপূজা, ধর্মীয় রীতিনীতি ও ব্রাহ্মণদের আধিপত্য খর্ব করাই ছিল এই মন্ডলীর প্রধান উদ্দেশ্য।

মানবধর্মসভা : মানবধর্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন পান্ডুরঙ্গ ও দুর্গারাম মাঞ্জোরাম। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে দাদবা পাড়ুরঙ্গ ‘ধর্মবিবেচন’ বলে একটি নীতি প্রবর্তন করেন। দুর্গারাম মাঞ্জোরাম ছিলেন একজন শিক্ষিত গুজরাটি যুবক। মানবধর্মসভার অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন দিনমনি শঙ্কর, দলপিত্রম ভাগ্যবাই এবং দামােদর দাস। মানবধর্মসভা সুরাটে প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে। প্রতি রবিবার এদের আলােচনা সভা হত।

প্রার্থনা সমাজ : পরমহংস সভা থেকেই ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রার্থনা সমাজের আবির্ভাব ঘটে। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে মহাদেব গােবিন্দ রাণাড়ে এবং আর.জি.ভান্ডারকর প্রার্থনা সমাজে যােগ দেন। মহাদেব গােবিন্দ রাণাডে প্রার্থনা সমাজের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য বিধবা বিবাহ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “দাক্ষিণাত্য সমিতি”। প্রতাপচন্দ্র মজুমদার ‘শুবােদ্ধ’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। এস.পি. কেলকার বােম্বাইয়ে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে বিথল রামজি শিন্ডে ‘ডিপ্রেস্ট ক্লাস মিশন প্রতিষ্ঠা করেন।

আর্য সমাজ : ২৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে আর্যসমাজ স্থাপন করেন স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী। আর্য সমাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল শুদ্ধি আন্দোলন। আর্য সমাজ উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট ও পাঞ্জাবে ছড়িয়ে পড়ে প্রভাব বিস্তার করে।

দয়ানন্দ সরস্বতী (১৮২৪-১৮৮৩) : তার আসল নাম মুলা শঙ্কর। তিনি গুজরাটের তঙ্করে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫ বছর বয়সে মথুরায় তিনি দীক্ষা নেন। তিনি বেদের উপর জোর দেন এবং তার প্রধান আদর্শ ছিল হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা। তিনি তিনটি গ্রন্থ লেখেন। হিন্দিতে ‘সত্যার্থ প্রকাশ সংস্কৃতে ‘বেদভাষ্য’ এবং কিছুটা সংস্কৃত ও কিছুটা হিন্দিতে ‘বেদভাষ্য ভূমিকা। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে হিন্দুধর্ম ত্যাগী হিন্দুকে হিন্দুধর্মের অভ্যন্তরে আনতে তিনি শুদ্ধি আন্দোলন চালু করেন। তিনি বলতেন ‘বেদে ফিরে যাও’ (Go to Vedas)। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে আর্যসমাজ দুটি ভাগে ভাগ হয়। একটি ভাগ স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দের নেতৃত্বে ‘গুরুকুল সম্প্রদায় এবং অপরটি লালা লাজপত রায় ও লালা হংসরাজ-এর নেতৃত্বে দয়ানন্দ অ্যাংলাে বৈদিক সম্প্রদায় (DAV Section)। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দ বা লালা মুন্সীরাম হরিদ্বারে গুরুকূল আশ্রম স্থাপন করেন। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে লালা হংসরাজ লাহােরে দয়ানন্দ অ্যাংলাে বৈদিক কলেজ স্থাপন করেন। লাহােরে আর্যসমাজের প্রধান কমিটিকে বলা হত ‘অন্তরঙ্গ সভা’। আর্যসমাজের সদস্যরা গােরক্ষা সমিতি প্রতিষ্ঠা করে গােহত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর রাজনৈতিক স্লোগান ছিল ভারতবর্ষ ভারতীয়দের জন্য (India for the Indians)।

থিওসফিক্যাল সােসাইটি : ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে মাদাম হেলেনা পেট্রোভা ব্লাভাটস্কি (একজন মহিলা) এবং হেনরি স্টিল ও ওয়ালকট (একজন আমেরিকান) নিউইয়র্কে থিওসফিক্যাল সােসাইটি স্থাপন করেন। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে ব্লভাটস্কি ‘I sis Unviled’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁরা ভারতে আসেন। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজের নিকট আদিয়ার নামক স্থানে প্রধান কেন্দ্র স্থাপন করেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে আইরিশ মহিলা অ্যানি বেসান্ত ভারতে আসেন এবং থিওসফিক্যাল সােসাইটিতে যােগ দেন। ব্লাভাটস্কির সঙ্গে তিনি ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে লুসিফার (Lucifar) নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে অ্যানি বেসান্ত বারাণসীতে সেন্ট্রাল হিন্দু স্কুল স্থাপন করেন যেটি পরবর্তীকালে মদনমােহন মালব্যের তত্ত্বাবধানে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে কর্নেল ওয়ালকটের মৃত্যুর পর অ্যানি বেসান্ত থিওসফিক্যাল সােসাইটির প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে অ্যানি বেসান্তের মৃত্যুর পর জর্জ অরুনডেল থিওসফিক্যাল সােসাইটির প্রেসিডেন্ট হন। থিওসফিক্যাল সােসাইটির প্রথম ভারতীয় প্রেসিডেন্ট হন ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে সি. জিনরাজ দাশ।

ইয়ং বেঙ্গল : ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরােজিও কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৮২৬-৩১ সময়ে তিনি ছিলেন হিন্দু কলেজের শিক্ষক। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলেরাতে মারা যান। তার অনুগামীদের বলা হয় ডিরােজিয়ান। তাদের আন্দোলনকে বলা হয় ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন। ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে মানিকতলায় ডিরােজিও অ্যাকাডেমিক অ্যাসােসিয়েশান স্থাপন করেন। ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে ডিরােজিও ‘পার্থেনন’
নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এছাড়াও তিনি এথেনিয়াম ও কালাইডােস্কোপ নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি ফকির অফ ঝঙ্গিরা ছদ্মনামে লিখতেন।

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে “বিধবা বিবাহ আইন” পাশ হয়। (Act XV OF 1856)। বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষার উন্নতির জন্য 35টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হন। তিনি অব্রাহ্মণ ছাত্রদের সংস্কৃত কলেজে ভর্তি করেন। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর কোলকাতায় (বেসরকারী) মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলেন। ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী তাকে ‘ঐতিহ্যশালী আধুনিকতাবাদী’ বলেছেন (Traditional Modernizer)।

গােপালহরি দেশমুখ : গােপালহরি দেশমুখ ‘লােকহিতবাদী’ নামে পরিচিত ছিলেন। সনাতন হিন্দু ধর্মের তিনি বিরােধিতা করেন। জ্ঞান প্রকাশ’ নামে পুস্তিকার মাধ্যমে তিনি তার মতাদর্শ প্রচার করতেন।

মহাদেব গােবিন্দ রানাডে : বিচারপতি মহাদেব গােবিন্দ রানাডে ছিলেন মহারাষ্ট্রের সমাজ সংস্কারক এবং প্রার্থনা সমাজের সদস্য। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতীয় জাতীয় সামাজিক সম্মেলন’ (Indian National Social Conference) এর উদ্বোধন করেন। তার প্রচেষ্টায় গােপাল গণেশ আগারকর ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে ডেকান এডুকেশন সােসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। গােপাল কৃষ্ণ গােখলে মহাদেব গােবিন্দ রানাডেকে গুরু বলে স্বীকার করেন। পুণাতে ডেকান এডুকেশান সােসাইটি প্রতিষ্ঠা করতে গােপাল গণেশ আগারকরকে সাহায্য
করেছিলেন তিলক, ভি.কে. চিপলঙ্কার এবং মাধবরাও নামজোশী। মহাদেব গােবিন্দ রানাডেকে বলা হত পশ্চিম ভারতের সক্রেটিস।

জ্যোতিবা ফুলে : পুণাতে ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। জাতিতে তিনি ছিলেন মালি। তিনি নারীশিক্ষার উন্নতি এবং অস্পৃশ্যতার বিরােধিতা করতেন। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি সত্যশােধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মহারাষ্ট্রে বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেন। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘গুলাম গিরি’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। তাঁর রচিত অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল—সার্বজনিক, সত্যধর্মপুস্তক, ঈশারা এবং শিবাজীর জীবনী। ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিবা ফুলেকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দেওয়া হয়।

শিব ওয়াল সিংহ (তুলসীরাম) : তিনি সিব, ওয়াল সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে তিনি আগ্রাতে রাধা স্বামী সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন একেশ্বরবাদী। এই সম্প্রদায়ের প্রধানগ্রন্থ ছিল সারবচন। তুলসীরামের মতে, মুক্তির উপায় হল সুরাত শব্দযােগ (Surat Subdyoga)। এই সম্প্রদায়ের কোন বিশেষ হিন্দু দেবতা, পবিত্র স্থান এবং মন্দির ছিল না। শিব নারায়ণ অগ্নিহােত্রী ও উত্তর প্রদেশের অধিবাসী এবং রুকী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করেন ইঞ্জিনিয়ারিং। তিনি লাহােরের ব্রাহ্মসমাজের সদস্য ছিলেন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি লাহােরে দেব সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। দেব সমাজের ধর্মীয় গ্রন্থকে বলা হত ‘দেব শাস্ত্র এবং ধর্মকে বলা হত ‘দেব ধর্ম।

এন.এম যােশী : তিনি প্রথমে ‘সার্ভেন্টস অব ইন্ডিয়া’ সােসাইটির ‘একজন সদস্য ছিলেন। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বােম্বাইয়ে তিনি ‘সােসাল সার্ভিস লীগ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি বােম্বাইতে অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে AITUC পরিত্যাগ করেন এবং ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন চালু করেন।

বীরেশলিঙ্গম পান্তলু : তিনি ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে অন্ধ্র প্রদেশ ‘রাজামুন্দ্রি সােসাল রিফর্ম অ্যাসােসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিধবাদের পুনর্বিবাহের জন্য আন্দোলন শুরু করেন।

• মুসলিম সংস্কার আন্দোলন :-

আলিগড় আন্দোলন : স্যার সৈয়দ আহমদ খান (১৮১৭-৯৮) আলিগড় আন্দোলন শুরু করেন মুসলিমদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষা বিস্তার এবং সমাজ সংস্কারের জন্য। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহের সময় তিনি বিজনাের-এর সদর আমিন ছিলেন। ‘On the Loyal Mahomedans of India’ নামক গ্রন্থে তিনি ভারতের মুসলমানদের শােচনীয় অবস্থার কথা তুলে ধরেন। তিনি মুসলমানদের তালাক দেওয়ার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তােলেন। সৈয়দ আহমদ খান উর্দুতে তাহ জিব-উল-আখলক এবং আশবাদ-ই-ভাগবতী পত্রিকা প্রকাশ করেন ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ইংরেজী ‘পাইওনিয়ার’ নামে আর একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।
১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি গাজীপুরে একটি ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন সায়েন্টিফিক সােসাইটি। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘মহামেডান এডুকেশনাল কনফারেন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কমিটি ফর এ্যাডভান্সমেন্ট অফ লার্নিং অ্যামং দ্য মহামেডানস্ অফ ইন্ডিয়া’ নামে একটি সংস্থা গঠন করেন ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে। ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম উইলসন হান্টার ‘ভারতীয় মুসলমান’ (The Indian Mussalmans) গ্রন্থটি রচনা করেন। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি আলিগড়ে একটি আধুনিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে আলিগড় মহামেডান অ্যাংলাে ওরিয়েন্টাল কলেজে রূপান্তরিত হয়। আলিগড় মহামেডান অ্যাংলাে ওরিয়েন্টাল কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন লর্ড লিটন। বড়লাট এই কলেজটির জন্য দশ হাজার টাকা অনুদান দেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে এটি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। আলিগড় কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন থিয়ােডাের বেক। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে বেক ইউনিয়ন ইন্ডিয়ান প্যাট্রিয়টিক অ্যাসােসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে বেকের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মহামেডান অ্যাংলাে-ওরিয়েন্টাল ডিফেন্স অ্যাসােসিয়েশন অফ আপার ইন্ডিয়া’। বেকের সম্পাদনায় প্রকাশিত হত ‘আলিগড় ইনস্টিটিউট’ গেজেট। ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে স্যার সৈয়দ ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল’-এর সদস্য হন। আলিগড় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য ব্যক্তিরা হলেন—আলতাফ হােসেন আলি, ডঃ নাজির আহম্মদ, চিরাগ আলি, নবাব মুসিন-উল-মূলক, শিবলি নােমানি, বিখার-উল-মুলক, খুদা বক্স প্রমুখ।

দেওবন্দ আন্দোলন (Deoband) : মৌলানা হুসেন আহমদ ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে ‘দার-উল-উলাম’ প্রতিষ্ঠা করেন দেওবন্দে। মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় অনুপ্রেরণা জাগানাে এবং নৈতিক অবস্থার উন্নতি করা ছিল এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য। মহম্মদ কাসিম আনতবি এবং রশিদ আহমেদ গঙ্গোহি ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে দেওবন্দ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিদ্যালয় পাশ্চাত্য শিক্ষা এবং ইংরেজী শিক্ষার বিরােধী ছিল। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হলে এই বিদ্যালয় অভ্যর্থনা জানায়। কিন্তু আলিগড় আন্দোলনের প্রতি এই বিদ্যালয় ধর্মীয় ডিক্রি জারী করে। দেওবন্দ আন্দোলনের অনুরাগী মৌলানা আবুল কালাম আজাদ জাতীয় আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

অহর আন্দোলন : ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে অহর আন্দোলন শুরু হয় মৌলানা মহম্মদ আলি, হাকিম আজমল খান, মাজাহার-উল-হকের নেতৃত্বে। এই আন্দোলন ছিল আলিগড় আন্দোলনের বিরুদ্ধে। এরা স্বশাসন এবং জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।

পার্শী সংস্কার আন্দোলন : ইরানের জরথুষ্ট মতাবলম্বী শরণার্থীরা পার্শী নামে পরিচিত। পার্শীরা ১৭৩৬ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটে আসেন। তাদের মন্দিরকে বলা হত ‘ ডকমা ’ (Tower of Silence)। ১৭৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের পার্শীরা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। যারা ইরাণের ক্যালেন্ডার গ্রহণ করেছিল তাদের বলা হত কাদমি, এবং তাদের বিরােধী গােষ্ঠীকে বলা হত শাহেনশাহী। শাহেনশাহী গােষ্ঠীরা বােম্বাইয়ে পার্শী আন্দোলন শুরু করে। এদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন ধনী বণিক, জাহাজ নির্মাণকারী ও বাণিজ্যিক দালাল। ১৮৪০-এর দশকে নওরােজি ফার্টুনজি একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন, নাম ফা-ই-পামশিদ। ১৮৫০
খ্রিস্টাব্দে ‘তারিখ ফার্দিষ্ট’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে ফার্টুনজির সভাপতিত্বে রেহনুমাই মাজদায়সান সভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সভা প্রতিষ্ঠা করতে টাকা দেন কে.এন. কামা। এর সচিব নির্বাচিত হন এস.এস. বেঙ্গলী। ইনি ছিলেন একজন লেখক। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘জগৎমিত্র ’ নামে একটি মাসিক ও ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে ‘জগৎপ্রেমী’ নামে আর একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই সভার নিজস্ব পত্রিকা ‘রস্তগপ্তার’ প্রকাশ করেন দাদাভাই নৌরজি। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে এম.এইচ. কামা সূর্যোদয় পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং এর সম্পাদক ছিলেন এম.বি.মিনােচার। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে রেহরামজি সেরওয়ানজি মালাবারি ‘বয়সসম্মতি’ আইন পাস করেন

• শিখ সংস্কার আন্দোলন :-

নিরঙ্কারী আন্দোলন : বাবা দয়াল দাস (১৭৮৩-১৮৫৫) এই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৪০-এর দশকে তিনি প্রচার করেন যে ভগবানের কোন আকার নেই। গুরু নানকের আদি গ্রন্থের উপর জোর দেন। তিনি মাংস খাওয়া, পানীয়, মিথ্যা কথা বলা, ওজনে কম দেওয়া ইত্যাদির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তােলেন। তার পুত্র দরবার সিং হুকুম নামা প্রচার করেন। দরবার সিং-এর ছােটোভাই রতন চাদ অনেক নতুন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন ও বিরেদারদের নিয়ােগ করেন। এরপর এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন গুরদিৎ সিং।

নামধারী : বাবা রাম সিং (১৮১৬-৮৫) নামধারী আন্দোলন শুরু করেন। ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কুকা আন্দোলনের নেতা বালাক সিং-এর শিষ্য হন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি রামসিংকে উত্তরাধিকার মনােনীত করে যান। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে রাম সিং নামধারী আন্দোলন শুরু করেন গুরু গােবিন্দ সিং-এর খালসার অনুকরণে। তিনি গ্রন্থসাহেবের উক্তিগুলাে গুরুবানী নামে তাঁর অনুগামীদের মধ্যে ব্যাখ্যা করতেন। প্রতিটি সিংহ উপাধিধারীর হাতে তলােয়ারের পরিবর্তে লাঠি রাখার নির্দেশ দেন।

সিংহসভা  : ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে অমৃতসরে সিংহসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। নামধারী আন্দোলন ও শ্রদ্ধারামের আর্যসমাজের অনুকরণে। ঠাকুর সিং সন্ধিওয়ালিয়া প্রেসিডেন্ট ছিলেন সিংহসভার ও গিয়ানি গিয়ানসিং ছিলেন সচিব। সিংহসভর অনুপ্রেরণায় ও সহযােগিতায় গুরমত গ্রন্থ প্রচারকসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ও ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে খালসা ট্রাস্ট সােসাইটি স্থাপিত হয়।

লাহাের সিংহ সভা  : ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের ২ নভেম্বর লাহােরে সিং সভা প্রতিষ্ঠা করেন অধ্যাপক গুরুমুখ সিংহ ও ভাই দিৎ সিংহ। লাহাের সিংহ সভার প্রথম সভাপতি ছিলেন দিওয়ান বুটা সিংহ ভাই দিৎসিংহছিলেন প্রথম সচিব। ভাই দিৎ সিংহ সুদান নাটক রচনা করেন যেখানে শিখ ধর্মের প্রতি ব্যঙ্গ করা হয়। ফলে তাকে কোর্টে তােলা হয়। লাহাের সিংহ সভার শাখা বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠে।

অন্যান্য সভা : ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে, অমৃতসরে সাধারণ সভা গড়ে ওঠে। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এর নাম হয় খালসা দিওয়ান। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে লাহাের সিংহ সভা তাদের নিজস্ব খালসা দিওয়ান প্রতিষ্ঠা করেন। লাহাের খালসা দিওয়ান নাভার মহারাজার সাহায্য পেয়েছিল। বাসুর সিংহ সভা শিখ সামরিক শক্তি গঠনে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা নেয়। এই সভার প্রধান নেতা ছিলেন ভাই তেজ সিংহ। নিম্নবর্ণের রাহােভিয়া শিখেরা আর্যসমাজের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তাঁরা শুদ্ধি আন্দোলনের দ্বারা হিন্দুধর্মে ফিরে যান।

আকালি আন্দোলন : ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে লালা লাজপত রায়ের অনুপ্রেরণায় লাহােরে অসহযােগ আন্দোলন শুরু হয়। দুর্নীতিগ্রস্ত মহন্তদের হাত থেকে গুরুদ্বারার নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পাঞ্জাবে আকালি আন্দোলন শুরু হয় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে। অমৃতসর স্বর্ণমন্দিরে সরকার নিযুক্ত প্রবন্ধক অরুর সিংহ জেনারেল ওভায়ারকে সম্মানসূচক শিখ হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহ দমনকারী নিকলসন (যিনি দিল্লীর কষাই নামে পরিচিত ছিলেন) শিখ হন এবং নাম নেন নিকলচসয়ান সাহিব। সরকার ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে শিখ গুরুদ্বার আইন প্রবর্তন করেন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত মহন্তদের অপসারণ করেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে এই আইনের সংশােধন করা হয় এবং শিরােমনি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি (SGPC) প্রতিষ্ঠিত হয়।

• হিন্দু সামাজিক ধর্মীয় আন্দোলনের তালিকা-

প্রতিষ্ঠানের নাম সাল স্থান প্রতিষ্ঠাতা
1. আত্মীয় সভা ১৮১৫ কলকাতা রামমোহন রায়
2. ব্রাহ্ম সমাজ ১৮২৮ কলকাতা রামমোহন রায়
3. ধর্মসভা ১৮২৯ কলকাতা রাধাকান্ত দেব
4. তত্ত্ববোধিনী সভা ১৮৩৯ কলকাতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
5. মানব ধর্ম সভা ১৮৪৪ সুরাট দূর্গারাম মানচোরাম
6. পরমহংসমণ্ডলী ১৮৪৯ মুম্বাই আত্মারাম পাণ্ডুরঙ্গ
7. রাধাস্বামী সৎসঙ্গ ১৮৬১ আগ্রা তুলসীরাম
৪, ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ ১৮৬৬ কলকাতা কেশবচন্দ্র সেন
9. প্রার্থনা সমাজ ১৮৬৭ মুম্বাই আত্মারাম পান্ডুরঙ্গ
10. আর্য সমাজ ১৮৭৫ মুম্বাই স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী
11. থিওসফিক্যাল সোসাইটি ১৮৭৫ নিউইয়র্ক মাদাম ব্লাভাটস্কি ও কর্ণেল ভয়ালকট
12. সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ ১৮৭৮ কলকাতা আনন্দমোহন বসু ও শিবনাথ শাস্ত্রী
13. ডেকান এডুকেশন সোসাইটি ১৮৮৪ পুনা জি.জি.আগরকর।
14. ইণ্ডিয়ান ন্যাশনাল সোশ্যাল কনফারেন্স ১৮৮৭ মুম্বাই এম. জি. রানাডে
15. দেব সমাজ ১৮৮৭ লাহোর শিবনারায়ণ অগ্নিহোত্রী
16. রামকৃষ্ণমিশন ১৮৯৭ বেলুড় স্বামী বিবেকানন্দ
17. সার্ভেন্টস অফ ইণ্ডিয়া ১৯০৫ মুম্বাই গোপালকৃষ্ণ গোখেলে
18. পুনা সেবা সদন ১৯০৯ পুনা মিসেস রামাবাঙ্গ রানাডে ও জি. কে. দেবর
19. সোশ্যাল সার্ভিস লিগ ১৯১১ মুম্বাই এন. এম. জোশী
20. সেবা সমিতি ১৯১৪ এলাহাবাদ এইচ এন কুঞ্জর
21. বয়েজ স্কাউটস অ্যাসোসিয়েশন ১৯১৪ মুম্বাই শ্রীরাম বাজপেয়ী
22. উইমেনস ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ১৯২৩ মাদ্রাজ শুভলক্ষ্মী আইয়ার
23. রেহনুমাই মাহদায়সন সভা ১৮৫১ মুম্বাই লওরোজি ফাদুনজি, দাদাভাই নওরোজি ও এস. এস বেঙ্গলি
24. সেবাসদন ১৮৮৫ লাহোর বিক্রম জি. মালাবারি
25. নীতি প্রকাশ সভা ১৮৭৩ লুধিয়ানা কানহালাল আলোকদারি

• মুসলিম সামাজিক ধর্মীয় আন্দোলনের তালিকা

প্রতিষ্ঠানের নাম সাল স্থান প্রতিষ্ঠাতা
1. দার-উল-ইলাম ১৮৬৬ দেওবন্দ মহম্মদ সেটলানা হসেন আহম্মদ
2. নাদোয়া-উল-উলেমা ১৮৯৪ লক্ষ্ণৌ মৌলানা শিবলি নোমানি
3. আহাল-ই-হাদিশ পাঞ্জাব মৌলান সঙ্গদ নাজির হুসেন
4. আহাল-ই-কোরান পাঞ্জাব মৌলবি আবদুল্লা চক্রবর্তী
5. বরেল উইস পাঞ্জাব মৌলানা আহমেদ রিজা খান
6. ফাদিয়ানি বা আহমেদিয়া কাদিয়ানি মির্জা গুলাম আহমেদ
7. মহমেডান এডুকেশনাল কনফারেন্স ১৮৮৬ আলিগড় স্যার সৈয়দ আহমেদ খান

• আধুনিক বাংলা সাহিত্যের উত্থান ও বাংলা ভাষার বিকাশবাংলা সাহিত্যঃ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের বিকাশ ঘটে শ্রীরামপুরের ও ফোর্ট ইউলিয়াম কলেজের মাধ্যমে। নাথানিয়েল বি. মিশনারি ও হ্যালহেড ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশ করেন। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরী বাইবেল বাংলায় অনুবাদ করেন। প্রথম বাংলা গদ্য ছিল রামরাম বসুর রচিত ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত’ ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে। ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে রামরাম বসু লিপিমালা রচনা করেন। মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার রচনা করেন বত্রিশ সিংহাসন’, ‘হিতােপদেশ’ ‘রাজাবলী’ ও ‘প্রবােধচন্দ্রিকা’। রাজা রামমােহন রায় লেখেন বেদান্ত গ্রন্থ। তাছাড়া তিনি উপনিষদ ও ভাগবতগীতার বাংলা অনুবাদ করেন। মধুসূদন দত্ত লেখেন মেঘনাদবধ কাব্য, শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী, তিলােত্তমা নাটক। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মদেবী, সুরসুন্দরী, কাথিত বেরী, পদ্মিনী উপাখ্যান উল্লেখযােগ্য। হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৃত্রসংহার কাব্য, ভারতবিলাপ, ভারতভিক্ষা, ভারত সংগীত ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য। হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলা হত বাংলার মিল্টন’। নবীনচন্দ্র সেন লেখেন রৈবতক, কুরুক্ষেত্র, প্রভাস, পলাশীর যুদ্ধ ইত্যাদি। রমেশচন্দ্র দত্ত রচনা করেন মহারাষ্ট্র জীবন প্রভাত, রাজপুত জীবনসন্ধা।   বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভারতকলঙ্ক, বাঙ্গালীর বাহুবল, বাঙ্গালীর ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব, কৃষ্ণচরিত, আনন্দমঠ, দেবীচৌধুরানী, সীতারাম ইত্যাদি। দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ, যতীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুরুবিক্রম, সরােজিনী, অশ্রুমতি ও স্বপ্নময়ী, দক্ষিণারঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের চা-কর দর্পণ, মীর মােশারফ হােসেনের জমিদার দর্পণ, উপেন্দ্রনাথ দাসের সরােজসরােজিনী, সুরেন্দ্রবিনােদিনী; অমৃতলাল বসুর হীরকচূর্ণ, গজদানন্দ ও যুবরাজ, গিরিশচন্দ্র ঘােষের সিরাজ-উদ-দৌলা, মীরকাশিম, ছত্রপতি শিবাজী; দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের প্রতাপসিংহ, দুর্গাদাস, মেবারপতন, শাজাহান; মাইকেল মধুসূদন দত্তের বুড়াে শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা ইত্যাদি নাটক; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শকুন্তলা, সীতার বনবাস, বর্ণপরিচয়, কথামালা ভ্রান্তিবিলাস, বােধােদয় ইত্যাদি।
এই সময় অনেক দেশাত্মবােধক গান ও কবিতা রচিত হয়। যেমন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মিলে সব ভারত সন্তান, মনমােহন বসুর দিনের দিন সর্বেদীন ভারত হয়ে পরাধীন, গগন্দ্রেনাথ ঠাকুরের লজ্জার ভারত ফল গাহিব কি করে, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাধীনতা হীনতায় কবিতা, হেমচন্দ্রের বিংশতিকোটি মানবের বাস, ঈশ্বর গুপ্তের দেশের কুকুর ধরি বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া ইত্যাদি।

হিন্দী সাহিত্য : খড়িবলি ভাষা থেকে আধুনিক হিন্দী সাহিত্যের উৎপত্তি হয়েছে। হিন্দী সাহিত্যের বিকাশকে তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়। যথা ভারতের যুগ (১৮৬৮-৯৩), দ্বিবেদীর যুগ (১৮৯৩-১৯১৮), ছায়াবাদের যুগ (১৯১৮-৩৭) এবং সমসাময়িক সাহিত্য (১৯৩৭-বর্তমান)। হরিশচন্দ্রকে বলা হয় আধুনিক হিন্দী সাহিত্যের জনক। তিনি ‘ভারতদুর্দশা’ গ্রন্থটি লেখেন। মৈথিলী শরণ গুপ্তা লেখেন জয়দ্রথ বধ, পঞ্চবটী, সাকেত, যশােধরা এবং মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য হিন্দীতে অনুবাদ করেন। বালকৃষ্ণ শর্মা লেখেন কাশি ও অপলক। মাখনলাল চতুর্বেদী লেখেন হিমােকিরিতনি, হিমতরঙ্গিনী। সূর্যকান্ত ত্রিপাঠী লেখেন জুহিকি কলি, অনামিকা, অর্চনা,পরিমল এবং আরাধনা; সুমিত্রানন্দন পন্থ লেখেন পল্লব, গুঞ্জন, যুগবানি, গ্রাম্য, স্বর্ণকিরণ, শিল্পী এবং লােকযাতন। জয়শঙ্কর প্রসাদ লেখেন কামারনি, ঝর্ণা, আমশু লহর। মহাদেবী ভার্মা লেখেন রশমি, নিরজ, সন্ধ্যাগীতা, যম এবং দীপশিখা। শিয়ারাম শরণগুপ্তা লেখেন গান্ধী, উন্মুক্ত, নকুল ও মৃন্ময়ী। সুভদ্রাকুমারী চৌহান লেখেন কঁসি কি রানি, মুকুল, ও উন্মাদিনী। রামেশ্বর শুক্লা লেখেন আকাল। হরিবংশ রাই বচ্চন লেখেন মধুবালা, মধুশালা ও মধুকলা। এস. এইচ. বাৎসায়ন লেখেন অজনীয়। শিবমঙ্গল সিং লেখেন সুমন। জয়শঙ্কর প্রসাদ লেখেন ছায়া, আকাশদীপ। প্রেমৰ্চাদমুন্সী লেখেন সেবাসদন, প্রেমাশ্রম, নির্মলা, কায়াকল্প, রঙ্গভূমি, ঘাবান এবং গােদান। জৈনেন্দ্রকুমার লেখেন সুনীতা, ত্যাগপত্র, সুখদা, বিবার্ত। ফানেশ্বর নাথ রেণু লেখেন ময়লা আঁচল। শচীন্দ্রনাথ বাৎসায়ন লেখেন শেখর এক জীবনী। ধরমবীর ভারতী লেখেন সুরজকা শতবন ঘােড়া। যশপাল লেখেন দাদাকমরেড, দেশদ্রোহী দিব্যা, মনুষ্য কি রূপ। জগদম্বা প্রসাদ দীক্ষিত লেখেন মুর্দাগড় এবং রাহিমাসুম রাজার লেখা অন্ধগাঁও।

উর্দু সাহিত্য : আলতাফ হােসেন হালি লেখেন হায়াত ইশাদি এবং হায়ত ই হাইদ। শিবলি নােমানি লেখেন সিরাত আন নােমান এবং আলফারুক। মুন্সী প্রেমৰ্চাদের সােজ-ই-বতন, নাজির আহমেদের মিরাত-উল-উরস, তবাত-আন-নাহ, ফাসানা-ই-মুফগল, আয়ামা। পণ্ডিত রতন নাথ সরহারের ফাসানা-ই-আজাদ, আবদুল হালিম সহরার-এর বদর-আন-নিশা কি মুশিবত এবং আঘ শাদিক্কি শাদি। মির্জা মহম্মদ হাদি লেখেন চমরাও জান আদা। মুন্সী প্রেমৰ্চাদের বাজারে-ই-হুসান, গােসা-ই-আফিয়াত, চৌগান-ই-হস্তি, ময়দান-ই-অমল এবং গােদন।

মারাঠি সাহিত্যঃ ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে মাধব জুলিয়ান একদল কবিদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তােলেন এর নাম রবিকিরণ মণ্ডলী। মাধব জুলিয়ানের বিরহ তরং, হরি নারায়ন আপ্তের লেখা মাধলীস্থিতি, বাবা পদমজির যমুনাপর্যটন, দয়া পাওয়ারের বালুতা ছিল মারাঠী ভাষায় প্রথম দলিত আত্মজীবনী।

তামিল সাহিত্য : উমারু পুলাভার ছিলেন প্রথম মুসলমান তামিল কবি। তিনি শিরাপুরানম রচনা করেন। মহম্মদ ইব্রাহিম লেখেন মুহাদিন পুরনম। তেম্বাবনি বটি লেখেন কনস্টানজিও বেসি। তিনি বিরামমুনিবর ছদ্মনামে লেখেন। সুব্রহ্মন্যম ভারতী লেখেন পাঞ্চালী শব্দম, কলিপাণ্ডু, কান্নানপাত্ত্ব এবং কুইলপাণ্ডু। ভি.ও. চিদাম্বরম লেখেন মেয়ারিভু এবং পাদাল তিরান্ত। দেশিকোবি নায়াগম লেখেন মালারুম মালায়ুম এবং ঔমর-খৈয়াম পাদালকল। পদুমাই ভেওল, তামিজহান ইদায়ম এবং শঙ্কলি গ্রন্থগুলি লেখেন কল্যাণসুন্দরম। এন.কে. রামলিঙ্গম রচনা করেন অভালাম অভানুম গ্রন্থটি। আজাকিন শিরুষ্টুও পান্তিয়ান পরিশ্র রচনা করেন ভারতী দশন। পরমার্ত গুরুকথাই গ্রন্থটি রচনা করেন বিরম মুনিবর। তামিল ভাষায় প্রথম উপন্যাস লেখেন বেদনায়াগম পিল্লাই। তার লেখা উপন্যাসটি হল পীরতবা মুদালিয়ার চোলিতিরম। নলতম্বী এবং রেঙ্গুন রাধা গ্রন্থ দুটি লেখেন সি.এন. আন্নাদুরাই।

ভারতীয়দের লেখা ইংরাজী সাহিত্য : ইংরাজীভাষায় প্রথম সাহিত্য লেখা শুরু করেন কলকাতা থেকে রামমােহন রায়, হেনরি ডিরােজিও, মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তরু দত্ত ইংরাজীতে কবিতা লেখেন। বঙ্কিমচন্দ্র লেখেন রামমােহনস্ ওয়াইফ। ব্রু দত্ত লেখেন অ্যানসিয়েন্ট ব্যালাড ও ল্যাজেন্ড অফ হিন্দুস্থান, রবীন্দ্রনাথ লেখেন গীতাঞ্জলি, সরােজিনী নাইডু লেখেন দা গােল্ডেন গ্রুেসােল্ড অফ দ্য ব্রোকেনউইং। অরবিন্দ ঘােষ লেখেন সাবিত্রী ও লাইফ ডিভাইন। গান্ধিজি লেখেন হরিজন, মাই এক্সপেরিমেন্ট উইথ টুথ। জওহরলাল নেহেরু লেখেন দি গ্লিম্পসেস অফ ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি, ডিসকভারি অফ ইণ্ডিয়া এবং অ্যান অটোবায়ােগ্রাফি। মুলকরাজ আনন্দ লেখেন কুলি, আনটাচেবল, ওম্যান অ্যান্ড দ্য কাউ, দ্য লস্ট চাইল্ড। আর কে নারায়ণ লেখেন সােয়ামি অ্যাণ্ড ফ্রেন্ডস, দ্য গাইড, দ্য ফাইনানশিয়াল এক্সপার্ট, ওয়েটিং ফর দ্য মহাত্মা। রাজারাও লেখেন কান্থপুরা, দ্য সার্পেন্ট অ্যান্ড দ্য রােপ, দ্য ক্যার্ট অ্যান্ড শেকসপিয়ার। নীরােদ চৌধুরী লেখেন অটোবাইওগ্রাফি অফ অ্যান অননােন ইণ্ডিয়ান।

Leave a Comment

Scroll to Top