রাজ্যের সূচনা ও পুনর্গঠন | Reorganization of States

রাজ্যের সূচনা ও পুনর্গঠন | Reorganization of States

 

রাজ্যের সূচনার বর্ষ রাজ্যের নাম
১৯৫৩ অন্ধ্রপ্রদেশ (ভারতের প্রথম ভাষাভিত্তিক তামিল রাজ্য)।
১৯৫৬ আসাম, বিহার, বােম্বাই, জম্মু ও কাশ্মীর, কেরালা, মহশূর, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ।(১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ‘কেন্দ্র-রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুসারে ভারত বিভক্ত ছিল ১৪টি অঙ্গরাজ্য ও ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে)।
১৯৬০ মহারাষ্ট্র, গুজরাট, (বােম্বাই পুনর্গঠন আইন অনুসারে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যের সূচনা)।
১৯৬২ পণ্ডিচেরী।
১৯৬৩ নাগাল্যান্ড (১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে নাগাল্যান্ড রাজ্য পুনর্গঠন আইন)।
১৯৬৬ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়।
১৯৬৯ মেঘালয়।
১৯৭০ ত্রিপুরা, মণিপুর।
১৯৭১ হিমাচল প্রদেশ।
১৯৭৫ সিকিম।
১৯৮৬ মিজোরাম।
১৯৮৭ অরুণাচল প্রদেশ।
১৯৮৭ গােয়া।
২০০০ ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাঞ্চল (মধ্যপ্রদেশ রাজ্য থেকে সৃষ্ট, বিহার রাজ্য থেকে সৃষ্ট, উত্তরপ্রদেশ রাজ্য থেকে সৃষ্ট)।

১২টি তফশিলের (Schedule) বিষয়বস্তু :
প্রথম তফশিল— অঙ্গরাজ্যসমূহ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ভূখণ্ডগত এলাকা ও তাদের গঠন।
দ্বিতীয় তফশিল— রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোর্টগুলির বিচারপতি, ভারতের মহাগণনা ও হিসাব পরীক্ষক প্রভৃতি পদাধিকারীদের বেতন ও ভাতাজনিত বিষয়।
তৃতীয় তফশিল— সরকারী অফিসে শপথ গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়।
চতুর্থ তফশিল— রাজ্যসভায় অঙ্গরাজ্যের ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে আসন বণ্টনের বিষয়াদি।
পঞ্চম তফশিল— তফশিলভুক্ত এলাকার প্রশাসনিক বিষয়।
যষ্ঠ তফশিল— আসাম, মেঘালয় ও মিজোরাম রাজ্যগুলিতে উপজাতিভুক্ত অঞ্চলের প্রশাসন সম্পর্কিত বিষয়।
সপ্তম তফশিল— তিনটি তালিকার মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন।
অষ্টম তফশিল— ২২টি আঞ্চলিক ভাষার স্বীকৃতি।নবম তফশিল— ভূমিসংস্কার সম্পর্কিত বিষয়।
দশম তফশিল— দলত্যাগবিরােধী ব্যবস্থা।একাদশ তফশিল— পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ও তার কার্যাদি।
দ্বাদশ তফশিল— মিউনিসিপ্যাল সম্পর্কিত ব্যবস্থা ও তার কার্যাদি।

ভারতীয় সংবিধান যে সমস্ত বিষয়গুলি অন্যান্য দেশের সংবিধান থেকে গ্রহণ করেছে (Borrowed features of the Indian Constitution) :

গৃহীত বিষয় বিদেশী সংবিধান
1. সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ব্রিটিশ সংবিধান
2. একনাগরিকত্ব ব্রিটিশ সংবিধান
3. আইনের অনুশাসন ব্রিটিশ সংবিধান
4. মৌলিক অধিকার মার্কিন সংবিধান
5. বিচারবিভাগের বিশেষ ক্ষমতা মার্কিন সংবিধান
6. যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কানাডার সংবিধান
7. বিচারবিভাগের নিরপেক্ষতা মার্কিন সংবিধান
৪. মৌলিক কর্তব্য রাশিয়ার সংবিধান
9. জরুরী অবস্থা জার্মান সংবিধান
10. অবশিষ্ট ক্ষমতা কেন্দ্রকে অর্পণ কানাডার সংবিধান
11. জরুরী অবস্থাকালে মৌলিক অধিকার-গুলির উপর বিধিনিষেধ আরােপ জার্মান সংবিধান জার্মান সংবিধান
12. রাষ্ট্রের নির্দেশমূলক নীতি আইরিশ সংবিধান
13. বিচারবিভাগীয় পর্যালােচনা মার্কিন সংবিধান মার্কিন সংবিধান
14. উচ্চকক্ষ বা রাজ্যসভায় মনােনীত সদস্য রাখার ব্যবস্থা আইরিশ সংবিধান
15. রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি আইরিশ সংবিধান
16. যুগ্ম তালিকা (Concurrent List) অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান
17. প্রস্তাবনার ভাষা অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান
18. সংবিধান সংশােধন পদ্ধতি দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধান
19. পরিকল্পিত অর্থনীতি রাশিয়ার সংবিধান
20. মন্ত্রীসভার যৌথ দায়িত্বশীলতা ব্রিটিশ সংবিধান
21. উপরাষ্ট্রপতির অস্তিত্ব মার্কিন সংবিধান
22. কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নীতি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন।

কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ মামলা বা কেসে সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোর্টের রায় বা অভিমত (A few important verdicts of the Supreme Court and High Courts on different cases) :-
1. এ. কে. গােপালন বনাম মাদ্রাজ রাজ্য মামলা (১৯৫০) : এই মামলায় সুপ্রীমকোর্টের অভিমত হল প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের জনগণই হল সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তবে সংবিধানের উদ্দেশ্য নির্ধারণ ও আইনানুগ ব্যাখ্যা মূলতঃ কার্যকরী অংশের ভিত্তিতেই করতে হবে, প্রস্তাবনার ভিত্তিতে নয়।
2. ভারত সরকার বনাম মদনগােপাল, মামলা (১৯৫৪) : এই মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দেন যে, জনগণ কর্তৃক স্বীকৃত ও গৃহীত সংবিধানকে মান্য করতে জনগণ নীতিগতভাবে বাধ্য। কারণ প্রস্তাবনার মাধ্যমে প্রতিপন্ন হয় যে, ভারতের সংবিধান জনগণের কাছ থেকে কর্তৃত্ব পেয়েছে।
3. বাবুলাল বনাম বােম্বাই রাজ্য মামলা (১৯৬০) : এই মামলায় সুপ্রীমকোর্ট রায় দেন যে, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের নাম, আয়তন ও সীমানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ঐ রাজ্যের মতামত ছাড়া কোনাে বিল পার্লামেন্টে পেশ করা যায় না (৩৭০নং ধারা)। কিন্তু অন্যান্য রাজ্যের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মতামত গ্রহণ করা পার্লামেন্টের পক্ষে আবশ্যক নয়।
4. শঙ্করীপ্রসাদ বনাম ভারত সরকার মামলা (১৯৫১) : এই মামলায় সুপ্রীমকোর্ট রায় দেন যে, পার্লামেন্ট সংবিধান সংশােধনের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার পরিবর্তন করতে পারে।5. সজ্জন সিং বনাম রাজস্থান রাজ্য মামলা (১৯৬৪) : এই মামলায় সুপ্রীমকোর্ট মন্তব্য করেন যে, পার্লামেন্ট মৌলিক অধিকার সমেত সংবিধানের যে কোনাে অংশ সংশােধন করতে পারে।
6. গােলকনাথ বনাম পাঞ্জাব রাজ্য মামলা (১৯৬৭) : এই মামলায় সুপ্রীমকোর্ট এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, পার্লামেন্ট মৌলিক অধিকার সংশােধন করতে পারে না। মৌলিক অধিকার হরণ বা ক্ষুন্ন করা যায় না।
7. কেশবানন্দ ভারতী বনাম কেরালা রাজ্য মামলা (১৯৭৩) : এই মামলায় সুপ্রীমকোর্ট রায় দেন যে, 24 ও 25তম সংবিধান সংশােধনী আইন বৈধ এবং মৌলিক অধিকার সংশােধনের ক্ষমতা পার্লামেন্টের আছে। কিন্তু সংবিধানের মৌলিক কাঠামাের (basic structure) পরিবর্তন করা যাবে না এবং সংবিধান সংশােধনের বৈধতা বিচারের ক্ষমতা আদালতের আছে।
8. মিনার্ভা মিলস বনাম ভারত সরকার মামলা (১৯৮০) : এই মামলায় সুপ্রীমকোর্ট রায় দেন যে, সংবিধান সংশােধনের ক্ষমতা পার্লামেন্টের আছে। কিন্তু মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করে পার্লামেন্ট নির্দেশমূলক নীতিকে অধিক প্রাধান্য দিতে পারে না।
9. সতীশচন্দ্র বনাম ভারত সরকার মামলা (১৯৫৩) : এই মামলায় সুপ্রীমকোর্ট এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, একই অবস্থায় অবস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে রাষ্ট্র কোনাে বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না।
10. চিরঞ্জিতলাল চৌধুরী বনাম ভারত সরকার (১৯৫০), হরনাথ সিং মামলা (১৯৫৪), বােম্বাই রাজ্য বনাম বালসারা (১৯৫১), আর, কে. ডালমিয়া বনাম তেন্ডুলকার মামলা (১৯৫৯) : এই সমস্ত মামলাগুলিতে সুপ্রীমকোর্টের সার্বিক অভিমত হল—“সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিরা সমভাবে রক্ষিত হবেন। (Equal protection means equal protection under equal circumstances)। ফলে রাষ্ট্র ব্যক্তিদের মধ্যে শ্রেণীবিভাগ করে এবং আইনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে যথাযথ সম্পর্ক বজায় রেখে বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যক্তিদের মধ্যে প্রভেদমূলক আইন প্রয়ােগ করতে পারে। তাই সাম্যের নীতিটির অর্থ সকল ব্যক্তির প্রতি রাষ্ট্রের সমান ব্যবহার বা অবস্থান নয়। ব্যক্তির অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রের আচরণ বিভিন্ন হবে। সুপ্রীমকোর্টের মতে, সংবিধানের ১৪ ধারায় সাম্য নীতিটি স্বীকৃত হলেও, রাষ্ট্র ‘যুক্তিসঙ্গত শ্রেণীবিভাজন করতে পারবে।
11. খারে বনাম দিল্লি রাজ্য (১৯৫০) : এই মামলায় সুপ্রীমকোর্টের অভিমত হল যে, জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে রাষ্ট্র স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার ও ভারতের যে কোনাে স্থানে বসবাসের অধিকারকে[১৯(৪) ও (৫)নং ধারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
12. রামচন্দ্র প্রসাদ বনাম বিহার রাজ্য মামলা (১৯৬১) : এই মামলায় সুপ্রীমকোর্ট রায় দেন যে, পার্লামেন্ট ও রাজ্যের আইনসভা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ব্যক্তির জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকরতে পারে।
13. মানেকা গান্ধী বনাম ভারতীয় ইউনিয়ন মামলা (১৯৭৮) : এই মামলায় সুপ্রীমকোর্টের অভিমত ছিল ব্যক্তির জীবন বা ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের জন্য রাষ্ট্র স্বৈরাচারী বা অযৌক্তিক কোনাে পদ্ধতির আশ্রয় নিতে পারবে না।
14. পশ্চিমবঙ্গ সরকার বনাম কেন্দ্রীয় সরকার (১৯৬৩) : এই মামলায় সুপ্রীমকোর্ট রায় দেন যে, কেন্দ্র সংবিধান অনুসারে অঙ্গরাজ্যের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারে।
15. ভারত ব্যাঙ্ক বনাম ভারত ব্যাঙ্কের কর্মচারীবৃন্দ মামলা : এই মামলায় সুপ্রীমকোর্টের রায় হল যে, ভারতের যে কোনাে আদালত বা ট্রাইব্যুনালের রায়, আদেশ বা দণ্ডের বিরুদ্ধে আপীল করার জন্য ‘বিশেষ অনুমতি’ (Special leave) সুপ্রীমকোর্ট দিতে পারে।

Leave a Comment

Scroll to Top