মৌর্যওর ভারত | সাতবাহন বংশ | কুষান শাসন | Post Mauryan Period
Short Notes On Post Mauryan Period (মৌর্যওর ভারত)
- মৌর্য শাসনের অবসানের ফলে ভারতের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা বিনষ্ট হয় এবং একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রের উত্থান ঘটে ।
- এছাড়া কিছু বিদেশী শক্তিও ভারতের উপর আক্রমণ শুরু করে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।এইসব শক্তিগুলি হলো ইন্দো গ্রিক, শক,পল্লব ও কুষান।
- এইসব বিভিন্ন ভারতীয় ও বিদেশী রাজবংশের মধ্যে দাক্ষিণাত্যের সাত- বাহন বংশ এবং উত্তর ভারতের কুষান রা খুবই উল্লেখযোগ্য ছিল।
- কুষান রাজাদের রাজধানী ছিল পুরুষপুর বা পেশোয়ার আর সাতবাহনদের রাজধানী ছিল দাক্ষিনাত্যের পৈঠান বা প্রতিষ্ঠান নগরী।
সাতবাহন বংশ
- সাতবাহন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সিমুক বা শ্রীমুখ।
- এই বংশের তৃতীয় রাজা প্রথম সাতকর্ণী-র নয় বছরের রাজত্বকাল সাতবাহন ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। তার রানী নায়নিকা র নানাঘাট শিলালিপি থেকে তার সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
- প্রথম সাতকর্নির মৃত্যুর একশো বছর পর গৌতমী পুত্র সতকর্নি সিংহাসনে বসেন। তিনি এই বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ নরপতি ছিলেন। তিনি শক রাজা নহপান কে পরাজিত করলেও শকদের অন্য শাখার অধিপতি রুদ্রদামন তাকে পরিজিত করেন।
- তিনি তার নিজ পুত্রের সঙ্গে রুদ্রদামনের কন্যার বিবাহ দেন।
- তিনি নিজে ব্রাহ্মন ধর্মের পৃষ্ঠপোষক হলেও বৌদ্ধদের প্রতি তিনি উদার ছিলেন। তিনি ছিলেন সুশাসক ও প্রযাকল্যাণকামী শাসক।
- তাঁর মৃত্যুর পর বশিষ্ঠী পুত্র পুলমায়ী সিংহাসনে বসেন।
- যজ্ঞশ্রী সাতকর্নী ছিলেন এই বংশের শেষ উল্লেখযোগ্য রাজা।
কুষান শাসন
- মৌর্যদের পতনের পর দক্ষিণ ভারতে ভারতীয় রাজবংশ সাতবাহনদের মতো উত্তর পশ্চিম ভারতের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কুষান সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে।
- কুষান-রা ছিল ইউ-চি নামে এক যাযাবর জাতির শাখা।
- প্রথম কদফিসিস বা কুজল কারা কদফিসিস ইউ চি জাতির সকল শাখাকে ঐক্যবদ্ধ করেন। পরবর্তী রাজা তার পুত্র বিম কদফিসিস ভারতে প্রথম কুষান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
- বিম কদফিসিসের পর প্রথম কণিষ্ক কুষান সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। তিনি কুষান বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন।
- তাঁর সিংহাসনে আরোহণের তারিখ সম্পর্কে ঐতিহাসিক রা বিভিন্ন মত প্রকাশ করেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিকদের মতে কণিষ্ক ৫৮ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন এবং তিনি “বিক্রম সম্বৎ” এর প্রবর্তক।
- আবার ফার্গুসন, টমাস প্রমুখ পণ্ডিতদের মতে তিনি ৭৮ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন এবং শকাব্দ নামে একটি সম্বত বা অব্দ প্রবর্তন করেন। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক ৭৮ খ্রিস্টাব্দকেই তার সিংহাসন আরোহণের কাল বলে মেনে নিয়েছেন।
- রাজধানী পুরুষপুর বা পেশোযার এবুদ্ধদেবের দেহাবশের উপর তিনি একটি বহুতল বিশিষ্ট বিশাল চৈত ও মঠ নির্মাণ করেন।
- বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মতপার্থক্য দূর করে বৌদ্ধ ধর্মকে একটি সুসংহত রূপ দান করার উদ্দেশ্যে বিখ্যাত বৌদ্ধ পণ্ডিত বসুমিত্র – র নেতৃত্বে তিনি কাশ্মীরে চতুর্থ বৌদ্ধ সঙ্গীতি বা মহাসম্মেলনে আয়োজন করেন।
- এই সম্মেলনে মহাযান ধর্মমতের উদ্ভব ঘটে এবং বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ গুলিকে সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদের ব্যবস্থা করা হয়।
- তিনমাসব্যাপী এই অধিবেশন এ গৃহীত ও সংকলিত ত্রিপিটকের ব্যাখ্যা সমূহ “মহাবিভাষ্য” নামে পরিচিত। এটির রচয়িতা হলেন বসুমিত্র।
- কণিষ্ক বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক হলেও পরধর্ম মতসহিষ্ণু ছিলেন। কণিষ্ক এর আমলে প্রচুর সংস্কৃত গ্রন্থ রচিত হয়।
- অশ্বঘোষ, নাগার্জুন, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রবিদ চরক, স্থপতি এজেসিলাস তাঁর রাজসভা অলংকৃত করতেন। অশ্বঘোষ রচনা করেন বুদ্ধচরিত, সূত্রালঙ্কার, সৌন্দরানন্দ কাব্য, বজ্রসূচী নামক গ্রন্থ। নাগার্জুন ছিলেন বিখ্যাত বৌদ্ধ দর্শন “প্রজ্ঞা- পারমিতা- শত- সহস্রিকা” গ্রন্থের রচয়িতা। চরক রচনা করেন “চরক সংহিতা”।
- তাঁর রাজত্বকালে মথুরা, সারনাথ,অমরাবতী ও গান্ধার এই চারটি স্থানে চারটি পৃথক শিল্পরীতির বিকাশ ঘটে ।
- তাঁর রাজত্বে গ্রিক,রোমান ও ভারতীয় শিল্প রীতির সমন্বয়ে উদ্ভুত গান্ধার শিল্প উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করে।
- তাঁর রাজত্ব কালে যে নবজাগরণের সূচনা হয় গুপ্ত যুগে তা চরমভাবে বিকশিত হোয়।
- কুষাণ রা ভারতে একটি দক্ষ শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন। বিদেশি ও ভারতীয় উভয় শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য নিয়ে এই শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠে।মোটকথা কুষাণ রা ভারতীয় ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রচনা করে।
Short Question-Answer on Post Mauryan Period (মৌর্যওর ভারত)
- সাতবাহন বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
উঃ সাতবাহন বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সিমুক। - সাতবাহন বংশের কোন রাজা শকদের পরাজিত করেন ?
উঃ সাতবাহন বংশের রাজা গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী শকদের পরাজিত করেন। - সাতবাহন বংশের শ্রেষ্ঠ নরপতির নাম কী ?
উঃ সাতবাহন বংশের শ্রেষ্ঠ নরপতির নাম গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী । - ভারতীয় পহৰ/পার্থিয়ান রাজাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কে ছিলেন?
উঃ ভারতীয় পহুব/পার্থিয়ান রাজাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন গন্ডােফানিস। - শকদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল?
উঃ শকদের আদি বাসস্থান ছিল মধ্য এশিয়ার সির-দরিয়া নদীর উত্তরাঞ্চলে। - নহপান কে ছিলেন ?
উঃ নহপান (Nahapana) ছিলেন শক-ক্ষত্ৰপ গােষ্ঠীর ক্ষহরত বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক। - কে কুষাণ সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন?
উঃ কুজুল বা প্রথম কদফিসেস কুষাণ সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন। - রুদ্রদামন কে ছিলেন?
উঃ রুদ্রদামন ছিলেন শক ক্ষত্রপদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাজা। - কনিষ্ক কখন সিংহাসনে আরােহণ করেন?
উঃ ৭৮ খ্রিস্টাব্দে কনিষ্ক সিংহাসনে আরােহণ করেন। - কনিষ্কের রাজধানী কোথায় ছিল?
উঃ কনিষ্কের রাজধানী ছিল পুরুষপুর বা বর্তমান পেশােয়ারে। - শকাব্দ কোন বছর থেকে প্রচলিত হয় ?
উঃ ৭৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে শকাব্দ প্রচলিত হয়। - কোন সম্রাটের আমলে কুষাণ বংশের পতনের সূচনা হয় ?
উঃ সম্রাট বাসুদেবের আমলে কুষাণ বংশের পতনের সূচনা হয়। - বুদ্ধচরিত গ্রন্থের রচয়িতা কে ?
উঃ অশ্বঘােষ বুদ্ধচরিত গ্রন্থের রচয়িতা। - নাগার্জুন কে ছিলেন ?
উঃ কনিষ্কের রাজসভায় বিখ্যাত বিজ্ঞানী ছিলেন নাগার্জুন। - চরক কে ছিলেন ?
উঃ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের প্রণেতা ছিলেন চরক। - “মহাভিভাষ্য” গ্রন্থের রচয়িতা কে?
উঃ “মহাভিভাষ্য” গ্রন্থের রচয়িতা বসুমিত্র। - “শত-সহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা” গ্রন্থের রচয়িতা কে ?
উঃ “শত-সহম্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা” গ্রন্থের রচয়িতা বৈজ্ঞানিক নাগার্জুন। - “মধ্যমিকা সুত্র” গ্রন্থের রচয়িতা কে ?
উঃ “মধ্যমিকা সূত্র” গ্রন্থের রচয়িতা বৈজ্ঞানিক নাগার্জুন। - বিদিশায় ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে কে গরুড়-স্তম্ভ নির্মাণ করান?
উঃ তক্ষশিলার রাজা এন্টালকিডাসের দূত হেলিওডােরাস (Heliodoros) বিদিশায় (বর্তমান বেসনগরে) ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে একটি গরুড়-স্তম্ভ নির্মাণ করান। - “বৃহৎসংহিতা” গ্রন্থের রচয়িতা কে?
উঃ “বৃহৎসংহিতা” গ্রন্থের রচয়িতা বরাহমিহির। - “আর্যভট্রীন” গ্রন্থের রচয়িতা কে ?
উঃ “আর্যভট্টীন” গ্রন্থের রচয়িতা আর্যভট্ট। - সুশ্রত কে ছিলেন?
উঃ সুশ্রত ছিলেন কুষাণ যুগের একজন শল্যবিদ।