সালােকসংশ্লেষ ও শ্বসন | Photosynthesis And Respiration
Short Notes on Photosynthesis And Respiration (সালােকসংশ্লেষ ও শ্বসন)
সালােকসংশ্লেষ (Photosynthesis) :
সবুজ উদ্ভিদেরা সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াতে সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিবর্তিত করে এবং এই শক্তি স্থৈতিক শক্তি রূপে খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। যখন প্রাণীরা এই খাদ্য গ্রহণ করে তখন স্থৈতিক শক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই পদ্ধতির দ্বারা কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং জল থেকে সরল শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত হয় এবং বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন গ্যাস নির্গত করে ; বিজ্ঞানী বার্নেস 1898 খ্রি. প্রথম সালােকসংশ্লেষ শব্দটির প্রবর্তন করেন। সালােকসংশ্লেষের অপর নাম ফোটোসিন্থেসিস। এটি একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ ফোটোস অর্থাৎ \’আলােক\’ ও সিন্থেসিস অর্থাৎ \’সংশ্লেষ\’।
সালোকসংশ্লেষের সংজ্ঞা : যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় সূর্যালােকের উপস্থিতিতে পাতায় উপস্থিত মেসােফিল কলার কোশে ক্লোরােফিলের সহায়তায় পরিবেশ থেকে গৃহীত 12 অণু জল ও বায়ু থেকে গৃহীত 6 অণু কার্বন ডাই-অক্সাইডের (CO2) সহায়তায় শর্করা অথবা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে এবং অক্সিজেন গ্যাস ত্যাগ করে তাকে সালােকসংশ্লেষ বলে।
সালােকসংশ্লেষের সামগ্রিক বিক্রিয়াকে সমীকরণের আকারে দেখানাে হল—
6CO2 + 12H2O ━ (ক্লোরোপ্লাস্ট & আলোক) → C6H12O6 + 6CO2 + 6H2O
সালােকসংশ্লেষকে অঙ্গার-আত্তীকরণ কিংবা কার্বন-অ্যাসিমিলেসান বলে কেন?
উত্তর : এই প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইড জীবদেহে অঙ্গীভূত হয় বলে সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াকে অঙ্গার-আত্তীকরণ অথবা কার্বন-অ্যাসিমিলেশান বলে।
সালােকসংশ্লেষকে উপচিতি প্রক্রিয়া বলার কারণ কী?
উত্তর : সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ তৈরি হয় বলে শুষ্ক ওজন বাড়ে ও আলােকশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে পরিবর্তিত হয় বলে এই প্রক্রিয়াকে উপচিতি প্রক্রিয়া বলে।
সালােকসংশ্লেষের স্থান : সবুজ রঞ্জকযুক্ত প্লাস্টিডকে ক্লোরােপ্লাস্টিড বলে। ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ক্লোরােপ্লাস্টের গঠন অনেকটা ডিম্বাকার ও দ্বি-একক পর্দাবিশিষ্ট অঙ্গাণু। পর্দার ভিতরের ধাত্রকে স্ট্রোমা বলে ও পর্দার ভিতরে অবস্থিত অসংখ্য চাকতির মতাে অংশকে গ্রানা বলে। এই গ্রানা অংশের মধ্যে বিশেষ একপ্রকার কণিকা থাকে যাকে কোয়ান্টোজোম বলে। এই কোয়ান্টোজোমকেই বলে সালােকসংশ্লেষকারী একক।
সালােকসংশ্লেষের সময়কাল : সৌরশক্তির একমাত্র উৎস সূর্যালােক। এই সূর্যালােক যেহেতু দিনের বেলায় থাকে তাই কেবলমাত্র দিনের বেলাতেই সালােকসংশ্লেষ ঘটে। তবে কৃত্রিম আলােতে নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যেও সালােকসংশ্লেষ সম্ভব। সূর্যালােক মাধ্যমে সৃষ্ট দৃশ্যমান আলাের বর্ণালীর মধ্যে ক্লোরােফিল প্রধানত লাল এবং নীল রং-কে বেশিমাত্রায় শােষণ করে।
হিল বিক্রিয়া কী?
উত্তর : বিজ্ঞানী রােবিন হিল প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন যে সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন অক্সিজেনের প্রধান উৎস জল। উক্ত জল আলােকের উপস্থিতিতে আলােক বিয়ােজন ঘটিয়ে H+ ও OH– আয়ন উৎপন্ন করে। হিল-এর এই বিক্রিয়াকে হিল বিক্রিয়া বলে।
সালােকসংশ্লেষ পদ্ধতি : প্রকৃতপক্ষে সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় জল জারিত হলে অক্সিজেন মুক্ত হয় এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড বিজারিত হয়ে কার্বোহাইড্রেট উৎপন্ন করে। 1905 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ব্ল্যাকম্যান সর্বপ্রথম প্রমাণ করেন যে সালােকসংশ্লেষ পদ্ধতিটি আলােক ও অন্ধকার এই দুই প্রকার পৃথক পর্যায় দ্বারা গঠিত। প্রথমে আলােক বিক্রিয়াটি ঘটে ও পরে অন্ধকার বিক্রিয়াটি ঘটে। এই বিক্রিয়ায় আলােকের কোনাে প্রয়ােজন হয় না।
আলােক বিক্রিয়াটি ক্লোরােপ্লাস্টের গ্রানা অংশে সংঘটিত হয় ও অন্ধকার বিক্রিয়াটি স্ট্রোমা অংশে ঘটে।
আলােক বিক্রিয়া : সালােকসংশ্লেষের আলােকদশটি সূর্যালােকের উপস্থিতিতে ক্লোরােপ্লাস্টের গ্রানার ভেতরে সম্পন্ন হয়। আলােকের উপস্থিতিতে ঘটে বলে একে আলােক রাসায়নিক বিক্রিয়াও বলে। আলোেক বিক্রিয়াটি ক্লোরােফিল অণুর P1 (P700) এবং PS11 (P680) Complex-এর মধ্যে সংঘটিত হয়।
ফটোফসফোরাইলেসান : ক্লোরােফিল অণুর PS11 Complex-এ ইলেকট্রন স্থানান্তরের ফলে নির্গত শক্তির সাহায্যে এবং সূর্যালােকের উপস্থিতিতে ADP ও Pi (অজৈব ফসফেট)-কে সংযুক্ত করে ATP অণুর সৃষ্টিকে ফটোফসফোরাইলেসান বলে।
ADP + Pi ━ (ক্লোরোপ্লাস্ট & আলোক) →ATP
ফটোফসফোরাইলেসান আবার দুপ্রকার—
অচক্রাকার ফটোফসফোরাইলেশান : এই প্রকার ফসফোরাইলেসানে ইলেকট্রনের প্রবাহ একদিকে হয় অর্থাৎ PS11 থেকে নির্গত ইলেকট্রন ফিওফাইটিন, প্লাস্টোকুইনােন ও সাইটোক্রোম f-এর মাধ্যমে PS1-এ পৌঁছায় এবং PS1 থেকে ফেরেডক্সিন (Fd)-এ পৌছায়। এই ইলেকট্রন পুনরায় কিন্তু PS11-তে ফিরে আসতে পারে না। ফলে এই প্রক্রিয়াকে অচক্রাকার অথবা Non-Cyclic ফসফোরইলেশান বলে।
চক্রাকার ফসফোরাইলেশান : এই প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রন চক্রাকার পথে আবর্তিত হয় অর্থাৎ P700 (PS1) থেকে নির্গত ইলেকট্রন সাইটোক্রোম b6 (Cytb6), প্লাস্টেটাকুইনােন (PQ) ও Cy + f-এর মাধ্যমে পুনরায় PS1-এ ফিরে আসে বলে এই প্রক্রিয়াকে চক্রাকার ফসফোরাইলেসান বলে। কিংবা Cyclic phosphorylation.
অর্থাৎ, সালােকসংশ্লেষের আলােক রাসায়নিক দশার পর্যায়ক্রমগুলি হল-
(1) ক্লোরােফিলের সক্রিয়করণ
(2) ফটোলাইসিস অফ ওয়াটার
(3) বিজারিত NADPH গঠন
(4) অক্সিজেন উৎপাদন
(5) ফটোফসফোরাইলেসান
অন্ধকার বিক্রিয়া : সালােকসংশ্লেষের আলােক বিক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই অন্ধকার বিক্রিয়া আরম্ভ হয়। অন্ধকার বিক্রিয়াতে আলােকের কোনাে প্রয়ােজন হয় না বলে একে অন্ধকার বিক্রিয়াও বলে। বিজ্ঞানী ব্ল্যাকম্যান প্রথম উক্ত অন্ধকার বিক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করেন বলে একে ব্ল্যাকম্যান বিক্রিয়াও বলে। সালােকসংশ্লেষের কার্বন ডাই-অক্সাইডের সংবন্ধন নিম্নলিখিত দুইটি পদ্ধতি দ্বারা সম্পন্ন হয়। যেমন—
(a) কেলভিন চক্র, (b) হ্যাচ ও স্ন্যাক চক্র।
(a) কেলভিন চক্রে ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিডই হল প্রথম স্থায়ী যৌগ। এই প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইড, রাইবিউলােজ 1-5 বিস ফসফেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে 3-ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয় এবং এই 3-ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড হতে পুনরায় রাইবিউলেজ 1-5, বিসফসফেট উৎপন্ন হয়। এটি একটি চক্রাকার পদ্ধতিতে আবর্তিত হয় বলে বিজ্ঞানী কেলভিনের নামানুসারে কেলভিন চক্রও বলা যায়। ইহার অপর নাম C3 চক্র।
হাচ ও স্ল্যাক চক্র : আগে ধারণা ছিল যে কেবলমাত্র সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় কেলভিন চক্রের মাধ্যমেই কার্বন ডাই-অক্সাইড সংবন্ধন ঘটত। কিন্তু পরবর্তীকালে হ্যাচ এবং স্ন্যাক বিজ্ঞানীদ্বয় প্রমাণ করেন যে কেলভিন চক্র ছাড়াও হ্যাচ এবং স্ল্যাক চক্রের মাধ্যমে CO2 সংবন্ধন ঘটে। তাদের মতে ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড সালােকসংশ্লেষের প্রথম স্থায়ী উৎপাদিত যৌগ নয়।
এই পদ্ধতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড ফসফোএনল পাইরুভিক অ্যাসিডের (PEP) সঙ্গে যুক্ত হয়ে 4 কার্বন বিশিষ্ট অক্সালাে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে (OAA) পরিণত হয় ও OAA থেকে ম্যালেট এবং ম্যালিক অ্যাসিড পাইরুভেটে (PEP) পরিবর্তিত হয়। ইহাও একটি চক্রাকার প্রক্রিয়াতে ঘটে। ইহাকে C4 pathway বা β-carbonylation pathwayও বলা হয়। সালােকসংশ্লেষে কেলভিন চক্রে প্রথম স্থায়ী জৈবযৌগ হল 3 কার্বন যুক্ত ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড (PGA) তাই কেলভিন চক্রকে C3 চক্র বলে। কিন্তু হ্যাচ এবং স্ন্যাক চক্রে প্রথম যৌগ হল 4-কার্বনবিশিষ্ট অক্সালােঅ্যাসিটিক অ্যাসিড তাই এই চক্রকে C4 চক্রও বলে।
যে সমস্ত উদ্ভিদ C3 চক্র মেনে চলে তাদের C3 উদ্ভিদ বলে কিন্তু যে সব উদ্ভিদ C4 চক্র মেনে চলে তাকে C4 উদ্ভিদ বলে।
C4 উদ্ভিদের সালােকসংশ্লেষের ক্ষমতা C3 উদ্ভিদ অপেক্ষা অনেক বেশি হয় তার কারণগুলি হল নিম্নলিখিত :
(i) C4 উদ্ভিদের পরম উষ্ণতা C3 উদ্ভিদের অপেক্ষা অনেক বেশি হয়।
(ii) C4 উদ্ভিদের photorespiration সম্পূর্ণ না থাকায় কার্বন অণুগুলি বিভিন্ন বিপাকীয় কার্যে অংশগ্রহণ করে থাকে।
উপরােক্ত কারণে C4 উদ্ভিদের সালােকসংশ্লেষের ক্ষমতা C3 উদ্ভিদ থেকে অনেক বেশি তাই C4 উদ্ভিদ কৃষিক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।
ব্যাকটেরিয়ার সালােকসংশ্লেষ : অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া পরজীবী এবং মিথােজীবী রূপে বাস করলেও কয়েকটি বিশেষ শ্রেণির ব্যাকটেরিয়া স্বভােজীরূপে বাস করে। যেমন—রােডােস্পাইরিলাম, রােডেসিউডাে-মােনাম, ক্লোরােবিয়াম ইত্যাদি। আবার কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে যারা রাসায়নিক পদ্ধতিতে খাদ্যসংশ্লেষ করে। যেমন—নাইট্রোসােমােনাস নাইট্রোব্যাকটার ইত্যাদি। ইহারা ব্যাকটেরিও ক্লোরােফিলের সহায়তায় সালােকসংশ্লেষ ঘটায়।
পার্থক্য – C4 ও C3 :
বৈশিষ্ট্য | C4 | C3 |
1. স্থান | মেসােফিল কলা কোশ ও বান্ডিল আবরণী | মেসােফিল কলাকোশ |
2. উৎপন্ন বস্তু | OAA | PGA |
3. CO2 গ্রাহক | ফসফোএনলপাইরুভিক অ্যাসিড (PEPA) | রাইবিউলােজবিসফসফেট (RuBP) |
4. চক্র | কেলভিন চক্র ও হ্যাচ-স্ল্যাক চক্র উভয়েই ঘটে। | শুধু কেলভিনচক্রে ঘটে। |
সালােকসংশ্লেষ পুর্তিবিন্দু কমপেনসেশন পয়েন্ট কাকে বলে?
যে সময়ে দিনের বেলা শ্বসনে নির্গত CO2 গ্যাস এবং সমপরিমাণ সালােকসংশ্লেষের জন্য গৃহীত CO2 গ্যাসের পরিমাণকে পুর্তিবিন্দু বলে।
সালােকসংশ্লেষকারী অনুপাত কী?
সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় নির্গত অক্সিজেনের পরিমাণ এবং গৃহীত কার্বন ডাই-অক্সাইডের (CO2) পরিমাণের অনুপাতকে বলে সালােকসংশ্লেষীয় অনুপাত।
PQ= 6O2/6CO2=6/6=1
সালােকসংশ্লেষের তাৎপর্য :
(1) শক্তির রূপান্তর ও সঞ্চয়—সালােকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং কার্বোহাইড্রেট রূপে জমা থাকে। সমস্ত জীবকূল এই খাদ্য গ্রহণ করেই জীবনধারণ করে। ফলে খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি গতিশক্তিরূপে মুক্ত হয়।
(2) খাদ্যসংশ্লেষ—সালােকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে সবুজ উদ্ভিদ শর্করাজাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে। প্রত্যক্ষ অথবা পরােক্ষভাবে সব জীবই খাদ্যের ব্যাপারে সবুজ উদ্ভিদের উপর নির্ভর করে।
(3) O2 গ্যাস প্রদান—একমাত্র সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় দুষিত CO2 গ্যাসের পরিমাণ কমে এবং O2 গ্যাস উৎপন্ন হয়। ফলে বায়ুতে O2 ও CO2-এর পরিমাণের সমতা বজায় থাকে।
(4) মানবসভ্যতা—মানবসভ্যতা ও সংস্কৃতি প্রত্যক্ষ এবং পরােক্ষভাবে বর্তমান যুগে সালােকসংশ্লেষের উপর নির্ভর করে। যেমন—পরিধেয় বস্ত্র, শিল্পসামগ্রী। যেমন—প্লাস্টিক, জ্বালানি, কাঠ প্রভৃতি উদ্ভিদ থেকেই পাওয়া যায়।
পার্থক্য – আলােক দশা ও অন্ধকার দশা :
আলােক দশা | অন্ধকার দশা |
(1) সূর্যালােকের প্রয়ােজন হয়। | (1) সূর্যালােকের প্রয়ােজন হয় না। |
(2) CO2 শােষিত হয় না। | (2) কার্বন ডাই-অক্সাইড শােষিত হয়। |
(3) ক্লোরােপ্লাস্টের গ্রানা অংশে ঘটে। | (3) ক্লোরােপ্লাস্টের স্ট্রোমা অঞ্চলে ঘটে। |
(4) গ্লুকোজ উৎপন্ন হয় না। | (4) গ্লুকোজ উৎপন্ন হয়। |
(5) NADP বিজারিত হয়। | (5) NADP বিজারিত হয় না। |
180 গ্রাম গ্লুকোজ অর্থাৎ প্রতি গ্রাম অণু গ্লুকোজ দহনে 686 K.cal শক্তি উৎপন্ন হয়।
লােহিত চ্যুতি বা Red drop বলতে কী বােঝ?
এমারসন এবং লুইস-এর মতে শুধুমাত্র হ্রস্ব আলােক তরঙ্গদৈর্ঘ্যেই যে সালােকসংশ্লেষ কম ঘটে তা নয়, দীর্ঘ আলােক তরঙ্গদৈর্ঘ্যেও সালােকসংশ্লেষ পদ্ধতির অবনতি ঘটে। দীর্ঘ আলােক তরঙ্গদৈর্ঘ্যের প্রভাবে সালােকসংশ্লেষের এই অবনতিকে লােহিত চ্যুতি অথবা Red drop বলে।
এমারসন প্রভাব কী?
বিজ্ঞানী এমারসন বলেন যে নিস্ক্রিয় অতি লাল আলােকের সঙ্গে যদি হ্রস্ব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলােক একত্রে প্রয়ােগ করা যায় তাহলে সালােকসংশ্লেষের গতিবৃদ্ধি পায়। অতি লাল আলােকের সঙ্গে, কমলা লাল আলােকের প্রভাবে সালােকসংশ্লেষের এই বৃদ্ধির হারকে এমারসন প্রভাব বলে।
আলােকশ্বসন বা ফটোরেসপিরেসান : আলােকের প্রভাবে সবুজ উদ্ভিদে যে শ্বসন ঘটে ফলত: যে অতিরিক্ত CO2 গ্যাস নির্গত হয় তাকে আলােকশ্বসন / Photorespiration বলে।
সালােকসংশ্লেষে সক্ষম প্রাণী— Euglena, ক্রাইস্যামিবা।
সালােকসংশ্লেষে অক্ষম উদ্ভিদ— ছত্রাক, স্বর্ণলতা।
সালােকসংশ্লেষে সক্ষম ব্যাকটেরিয়া— রােডােস্পাইরিলাম এবং রােডােসিউডােমােনাম।
শ্বসন (Respiration) :
প্রতিটি সজীব কোশে শ্বসন ঘটে।
শ্বসনের বৈশিষ্ট্য :
(1) শ্বসনে খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি জারিত হয়ে রাসায়নিক শক্তি (ATP নামক) অথবা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। স্থৈতিক শক্তি জমা থাকে রাসায়নিক বস্তুর মধ্যে।
(2) শ্বসন ঘটে প্রতিটি সজীব কোশে।
(3) এটি একটি অপচিতিমূলক বিপাক অর্থাৎ ভাঙনমূলক প্রক্রিয়া। কারণ এর দ্বারা দেহের শুষ্ক ওজন কমে যায়।
(4) শ্বসনে উৎসেচকের প্রয়ােজন ঘটে।।
(5) শসন একটি জৈব রাসায়নিক পদ্ধতি।
(6) শ্বসনের মাধ্যমে প্রাণীদেহের তাপমাত্রা বজায় থাকে। মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতির উপর নির্ভর করে শ্বসন দুই ভাগে বিভক্ত- সবাত শ্বসন এবং অবাত শ্বসন।
সবাত শ্বসনের বৈশিষ্ট্য :
(1) শ্বসন বস্তু সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়।
(2) সবাত শ্বসন ঘটে মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে।
(3) এই ধরনের শ্বসনে 1 গ্রাম অণু গ্লুকোজ থেকে 686 Kcal শক্তি উৎপন্ন হয়।
(4) এই শ্বসন কোশের সাইটোপ্লাজম এবং মাইটোকনড্রিয়াতে ঘটে।
(5) সবাত শ্বসন মূলত চারটি পর্যায়ে ঘটে। (i) গ্লাইকোলিসিস (ii) পাইরুভিক অ্যাসিডের জারণ (iii) ক্রেবস চক্র এবং (iv) প্রান্তীয় ভাসমান শ্বসন বা ফ্লোটিং রেসপিরেশান হল যে শসনে গ্লুকোজ শ্বসন। অপরপক্ষে প্রােটিন শ্বসন বস্তু হিসাবে ব্যবহৃত হলে তাকে বলে প্রােটোপ্লাজমীয় শ্বসন।
গ্লাইকোলাইসিসের বৈশিষ্ট্য :
(1) সবাত শ্বসনের প্রথম পর্যায়।
(2) কোশের সাইটোপ্লাজম অংশে ঘটে।
(3) এটি আবিষ্কার করেন তিন জার্মান বিজ্ঞানী। এম্বডেন (Embden), মেয়ারহফ (Meyerhof) এবং পারনেস (Parnas)। এঁদের নামের প্রথম অক্ষর অনুসারে মাইকোলিসিসকে বলে E.M.P. পথ।
(4) এই পর্যায়ে এক অণু গ্লুকোজ থেকে দুই অণু পাইরুভিক অ্যাসিড প্রস্তুত হয়।
ক্রেবস চত্রের বৈশিষ্ট্য :
(1) এটি ঘটে কোশের মাইটোকন্ড্রিয়ায়।
{2) এটি সবাত শ্বসনের দ্বিতীয় পর্যায়।
(3) এই পর্যায় আবিষ্কার করেন ইংরেজ জৈব রসায়নবিদ স্যার হ্যানস্ ক্রেবস(Sir Hans Krebs)। তার নামে উক্ত চক্রের নাম হয়েছে ক্রেবস চক্ৰ। এই পর্যায়কে সাইট্রিক অ্যাসিড় চক্রও বলে কারণ এই চক্রে প্রথম উৎপন্ন হওয়া অ্যাসিড হল সাইট্রিক অ্যাসিড।
(4) এই পর্যায়ে পাইরুভিক অ্যাসিড যুক্ত অক্সিজেনের দ্বারা জারিত হয়ে অক্সালোঅ্যাসেটিক অ্যাসিড নামে একপ্রকার জৈব অ্যাসিড তৈরী করে। মাঝখানে অ্যাসিটাইল CoA উৎপন্ন হয়।
অবাত শ্বসনের বৈশিষ্ট্য :
(1) এই ধরনের শ্বসন মুক্ত অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে ঘটে। তবে এখানে অক্সিজেনঘটিত যৌগ ও উৎসেচক লাগবেই।
(2) এটি অবায়ুজীবী জীবকোশে ঘটে।
(3) অবাত শ্বসন কোশের সাইটোপ্লাজমে ঘটে।
(4) গ্রাম অণু গ্লুকোজের অবাত শ্বসনে 50 Kcal তাপশক্তি উৎপন্ন হয়।
(5) এই প্রক্রিয়ায় আংশিক তাপশক্তি তৈরী হয়। (6) এই
প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন পদার্থগুলি কোশের মধ্যেই জমা হয়।
(7) এই প্রক্রিয়ায় কোনাে জৈব অ্যাসিড উৎপন্ন হয় না। তাই দ্রবণটি গেজে যায় না।
(৪) এই প্রক্রিয়ায় অণুজীবের কোনাে ভূমিকা নেই।
ফারমেনটেশন বা সন্ধানের (Fermentation) বৈশিষ্ট্য :
(1) সন্ধান বা ফারমেনটেশন সম্পূর্ণ অক্সিজেন ছাড়া ঘটে।
(2) ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদির দেহনিঃসৃত উৎসেচক দ্বারা সন্ধান ঘটে।
(3) ল্যাকটিক অ্যাসিড অথবা ইথাইল অ্যালকোহল জাতীয় জৈব অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। তাই দ্রবণটি গেজে যায়।
(4) এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন পদার্থগুলি কোশের বাইরে সঞ্চিত হয়।
কোহল সন্ধান প্রক্রিয়ার দ্বারা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের ব্যবহৃত বহু দ্রব্য তৈরী করা হয়। তার কয়েকটি সারণি নিম্নে দেওয়া হল। এইসব দ্রব্যগুলির বাণিজ্যিক মূল্য বর্তমান।
শ্বাসঅঙ্গ (Respiratory Organs) :
যে সকল অঙ্গের মাধ্যমে জীবদেহে শ্বাসবায়ুর আদান-প্রদান ঘটে তাকে বলে শ্বাসঅঙ্গ। উদ্ভিদ মূলতঃ কাণ্ড-ত্বকের লেন্টিসেল, পাতার পত্ররন্ধ্র এর মাধ্যমে শ্বাস-বায়ুর আদান-প্রদান ঘটে। সুন্দর, গরান, গেওয়া জাতীয় লবণাম্বু উদ্ভিদের ক্ষেত্রে শ্বাসমূল অক্সিজেন গ্রহণে সহায়তা করে। মরুভূমির উদ্ভিদ অথবা জেরােফাইট উদ্ভিদের ক্ষেত্রে বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন গ্রহণ মূলত রাত্রে ঘটে। দিনের বেলায় নিজের দেহে উৎপন্ন অক্সিজেন দ্বারা শ্বসন চলে। কারণ ঐ সকল উদ্ভিদের ক্ষেত্রে দিনের বেলায় পত্ররন্ধ্র বন্ধ থাকে। জলজ উদ্ভিদ মূলত ব্যাপন প্রক্রিয়ায় জল হতে অক্সিজেন গ্রহণ করে।
কয়েকটি মাছের (জিওল মাছ) অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র বর্তমান। এর ফলে তারা বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করতে সক্ষম। যেমন, শিঙিমাছের ফুলকার পিছনে অবস্থিত অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র নলাকার। মাগুর মাছের ফুলকার পাশে অবস্থিত শ্বাসযন্ত্র বৃক্ষাকার। কৈমাছের মাথার দুপাশে ফুলকার উপরে অবস্থিত অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র দেখতে ফুলের ন্যায়।
কোনও কোনও সামুদ্রিক প্রাণী এবং জোনাকির দেহ থেকে যে আলাে বিকীর্ণ হয় তা শ্বসনের ফলে উৎপন্ন শক্তি। সমুদ্রের
ইলেকট্রিক রে নামক মাছের দেহে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় (আত্মরক্ষার হাতিয়ারস্বরূপ) তা হল শ্বসনে উৎপন্ন শক্তি।
মানুষের শ্বসনতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য :
(1) মানুষের শ্বাস-অঙ্গগুলি হল একজোড়া করে বহিঃ ও অন্তঃনাসারন্ধ্র, একটি করে নাসাপথ, গ্লটিস, ল্যারিংক্স, ট্রাকিয়া, একজোড়া ব্রঙ্কাস ও একজোড়া ফুসফুস।
(2) শ্বসনে সহায়ক পেশী হল মধ্যচ্ছদা কিংবা ডায়াফ্রাস এবং পঞ্জর-মধ্যস্থ পেশী। মধ্যচ্ছদা থাকে ফুসফুসের তলার দিকে।
(3) ফুসফুসের আবরণীকে বলে প্লুরা। ফুসফুসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য বায়ুপ্রকোষ্ঠ অথবা বায়ুথলিকে বলে অ্যালভিওলাই। ফুসফুসে রক্তের সঙ্গে O₂ ও CO₂-এর আদান-প্রদান ঘটে। |
(4) ট্রাকিয়ার সামনের দিকে যে ছােটো নালী থাকে সেটি হল
ল্যারিংক্স বা বাগযন্ত্র। এটি একটি তরুণাস্থি বেষ্টিত। এর উপরের দিকে দুটি ভােকাল কর্ড থাকে। এখানে স্বর উৎপন্ন হয়।
(5) আমাদের নাকের বাইরের ছিদ্র দুটিকে বলে বহিঃনাসারন্ধ্র।
(6) শ্বাসকার্য দুটি প্রক্রিয়ায় ঘটে। প্রশ্বাস বা শ্বাস গ্রহণ ও এর দ্বারা বাইরের O₂ যুক্ত বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং নিশ্বাস:-এর দ্বারা ফুসফুসের CO₂ যুক্ত বায়ু বাইরে বেরিয়ে যায়।
(7) মস্তিষ্কের শ্বসন-কেন্দ্র (Respiratory centre) মােটর স্নায়ুর দ্বারা শাসকার্যের সময় শ্বাসপেশীর সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে।
(8) শ্বসন চক্র হল প্রশ্বাস ও নিঃশ্বাস প্রক্রিয়া। শ্বসনচক্র কার্যটি একজন সুস্থ পূর্ণবয়স্ক মানুষের মিনিটে 16-18 বার ঘটে। অর্থাৎ মিনিটে প্রশ্বাস ঘটে 16-18 বার, নিঃশ্বাস ঘটে 16-18 বার।
(9) ফুসফুসের বায়ুথলির ভেতর অক্সিজেনের পার্শ্বচাপ 100 mm পারদচাপের সমান। কিন্তু বায়ুথলিকে বেষ্টন করে অবস্থিত রক্তজালকে O₂-এর পার্শ্বচাপ 40mm পারদ চাপের সমান। ফলত: ব্যাপন প্রক্রিয়ায় O₂ রক্তজালকে প্রবেশ করে। O₂ পরিবাহিত হয় ভৌত দ্রবণরূপে (প্রতি 100 ml রক্তে 0-30 ml) ও রক্তের লােহিত কণাস্থিত হিমােগ্লোবিনের (Hb4) সাথে অক্সিহিমােগ্লোবিন (Hb4O8) রূপে।
মানুষের নিঃশ্বাস ও প্রশ্বাস বায়ুর মধ্যে O₂ ও CO₂-এর শতকরা পরিমাণের তালিকা :
CO₂ | O₂ | |
শ্বাসঃবায়ু | পরিমাণ | পরিমাণ |
নিঃশ্বাস বায়ু | 4.00% | 16.30% |
প্রশ্বাস বায়ু | 0.03% | 20.94% |
পায়রার ক্ষেত্রে ফুসফুস ছাড়াও অতিরিক্ত নয়টি বায়ুথলি দেখতে পাওয়া যায়। কারণ পায়রাকে অনেকসময় ধরে উড়তে হয় বলে বেশি শক্তির অর্থাৎ অক্সিজেনের দরকার হয়।
C2 চক্র হল এমন একটি চক্র যেখানে সালােক শ্বসনে 2-ফসফোগ্লাইকোলেট ও ফসফোগ্লিসারেটে পরিবর্তিত হওয়ার সময় মধ্যবর্তী যৌগ হিসাবে বিভিন্ন প্রকার দুই কার্বনযুক্ত যৌগ (যেমন- গ্লাইকোলেট, গ্লাইঅক্সালেট, গ্লাইসিন) উৎপন্ন হয়। C2 চক্র গ্লাইকোলেট চক্র নামেও অভিহিত।
মানবদেহের শ্বাসতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রােগ :
1. নিউমােনিয়া (Pheumonia) : ডিপ্লোকক্কাস নিউমােনি (Diplococcus plieumoniae) নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ফুসফুসের বায়ুথলিতে পুজ জমে শক্ত হয়ে যায়।
2. ব্রঙ্কাইটিস : ক্লোমশাখার মিউকাস পর্দা অথবা ব্রঙ্কাস এই রােগে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয়।
3. প্লুরিসি : ফুসফুসের পর্দা বা প্লুরার রােগ।
4. ফুসফুসীয় যক্ষ্মা বা পালমােনারি টিউবারকুলােসিস (Pulmonary tuberculosis) : মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলােসিস (Mycobacterium tuberculosis) নামে একপ্রকার ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে ফুসফুসের বায়ুথলির প্রাচীরে গুটি সৃষ্টিকারী রােগ।
5. হাঁপানি বা অ্যাজমা (Asthma) : ব্রঙ্কিওল ও ব্রঙ্কাসের শ্বাসকষ্টজনিত রােগ। এটি বায়ুথলি সংকোচনের জন্য উৎপন্ন হয়।
6. এমফাইসেমা (Emphysema) : দীর্ঘদিন ধরে হাঁপানিতে ভােগার ফলে বায়ুথলির স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হলে এই রােগ হয়।
7. সিলিকোসিস (Silicosis) : সিলিকণ কণা যদি ফুসফুসে প্রবেশ করে তবে সিলিকোসিস রােগ সৃষ্টি হয়।
8. অ্যানথ্রাকোসিস (Anthracosis) : কয়লার কণা ফুসফুসে প্রবেশ করে উক্ত রােগ সৃষ্টি হয়।
9. অ্যাসবেসটোসিস (Asbetosis) : অ্যাসবেসটাসের কণা ফুসফুসে ঢুকেই এই রােগ সৃষ্টি হয়।