পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতীরাজ | Panchayatiraj In West Bengal

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতীরাজ | Panchayatiraj In West Bengal

1. ‘পঞ্চায়েতীরাজ’ বলতে কি বােঝায় ?

উত্তর : গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ নীতিকে সার্থকভাবে রূপায়ণের জন্য ভারতবর্ষে পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি জানানাে হয়েছে। গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ভারতবর্ষে পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থাটি গড়ে তােলা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, পঞ্চায়েতীরাজ ও গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ সমাজ উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। গ্রামের মানুষদের স্বার্থকে পরিপূর্ণ করতেই পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থা গড়ে তােলা হয়েছে।

2. ‘পঞ্চায়েতীরাজ’ ব্যবস্থার গঠনটি (Structure) আলােচনা কর।

উত্তর : পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ত্রিস্তরবিশিষ্ট। গ্রামীণস্তরে গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লকস্তরে পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা স্তরে জেলা পরিষদ। গ্রামােন্নয়ন পরিকল্পনাকে কার্যকর করার ব্যাপারে মূল দায়িত্ব এই পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলির উপর ন্যস্ত করা হয়েছে।

3. জেলা পরিষদ কিভাবে গঠিত (Formed) হয় ?

উত্তর : প্রত্যেক জেলার নাম অনুসারে রাজ্য সরকার একটি জেলাপরিষদ গঠন করে। (a) পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিগণ। পদাধিকারবলে জেলা পরিষদের সদস্য, (b) মন্ত্রীবাদে জেলা থেকে নির্বাচিত লােকসভা ও বিধানসভার সদস্যগণ এবং জেলায় বসবাসকারী রাজ্যসভা সদস্যগণও পদাধিকার বলে জেলা পরিষদের সদস্য। (c) এছাড়া প্রতি ব্লক থেকে দুজন করে সদস্য ৫ বছরের জন্য সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন। (d) নতুন পঞ্চায়েত আইনে জেলা পরিষদের মােট আসনের এক-তৃতীয়াংশ মহিলাদের জন্য এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন তফশিলী জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।

4. জেলা পরিষদের আয়ের উৎসগুলি (Source of Income) কি কি?

উত্তর। জেলা পরিষদকে অর্থের জন্য বিশেষভাবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান ও ঋণের উপর নির্ভর করতে হয়। খেয়ে, যানবাহন ও জন্তু-জানোয়ারের উপর শুল্ক, যানবাহন ও নৌকার রেজিস্ট্রি-ফী, সেচের ও পানীয় জল সরবরাহ ও পথ আলোকিত করার জন্য আদায়ীকৃত কর। রাজ্যসরকার কর্তৃক প্রদত্ত ভূমি-রাজস্বের অংশ, দান ও সাহায্য সূত্রে আয়, পথ কর ও পূর্ত কর; জরিমানা সূত্রে প্রাপ্ত অর্থ প্রভৃতি থেকে জেলা পরিষদের কিছু আয় হয়।

5. জেলা পরিষদের প্রধান প্রধান কার্যগুলি (Basic functions) কি কি ?

উত্তর। জেলা পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলী বিশেষভাবে ব্যাপক। জেলাপরিষদ জেলা উন্নয়ন ও নিম্নতর পঞ্চায়েত সংস্থাগুলির ব্যাপারে
রাজ্যসরকারকে পরামর্শ দিতে পারে। কৃষি, পশুপালন, সমবায় আন্দোলন, সেচ, জনস্বাস্থ্য, হাসপাতাল, যোগাযোগ ব্যবস্থা, গ্রামীণ ঋণব্যবস্থা, প্রাথমিক ও বয়স্ক শিক্ষা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে পরিষদ উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করে, বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করে ও অর্থ সাহায্য করে। জেলা পরিষদের অন্যান্য কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গ্রামীণ হাটবাজার রক্ষণাবেক্ষণ, স্কুল ও অন্যান্য জনকল্যাণ সংস্থাকে অনুদান প্রদান, জল সরবরাহ, মহামারী প্রতিরোধ ইত্যাদি।

6. কি কি কারণে জেলা পরিষদের কোনো সদস্যকে পদচ্যুত (Suspended) করা যায় ?

উত্তর। পঞ্চায়েত আইন অনুসারে জেলা পরিষদের কোনো সদস্যকে কতকগুলি কারণে পদচ্যুত করা যায়। এই কারণগুলি হল – নীতিভ্রষ্টতা; দুমাসের অধিককাল সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ, নিজে সরাসরি বা কোনো অংশীদারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্যসরকার বা কোনো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্যবসায়ে যুক্ত থাকলে, কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্যসরকার বা কোনো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অধীন পারিশ্রমিকযুক্ত চাকরীতে যোগ দিলে ; দেয় কর না দিলে, আদালত কর্তৃক দেউলিয়া বা বিকৃত মস্তিষ্ক সম্পন্ন বলে ঘোষিত হলে এবং পরপর তিনটি সভায় অনুমতি ছাড়াই উপস্থিত না হলে।

7. গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রধান কাজগুলি (Main functions) কি কি ?

উত্তর। গ্রাম পঞ্চায়েতের দায়দায়িত্বের তালিকা বেশ দীর্ঘ। এই সমস্ত কাজকর্ম মূলতঃ তিন ধরনের। যথা—
(a) কতকগুলি কাজ আছে যার উদ্দেশ্য হল গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের যৌথ জীবনের স্বার্থে কিছু সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করা,
(b) কতকগুলি কাজের উদ্দেশ্য হল গ্রামের অর্থনীতিক জীবনের উন্নতিসাধন এবং
(c) কতকগুলি কাজের লক্ষ্য হল সামাজিক সুবিচারের নিশ্চয়তা প্রদান।

৪. গ্রাম পঞ্চায়েতের আয়ের উৎসগুলি (Sources of Income) কি কি?

উত্তর। গ্রাম পঞ্চায়েত আয়ের উৎসগুলিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল :
(a) জমি ও গৃহাদির উপর গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃক ধার্য কর, শুল্ক, মাশুল, যানবাহনের লাইসেন্স ফী প্রভৃতি ;
(b) স্কুল, হাসপাতাল, ডিসপেনসারি, হলঘর, বাজার, বিশ্রামাগার প্রভৃতি সর্বসাধারণের জন্য ব্যবহার্য সম্পদ খাতে বা সেবামূলক কার্যাদির বিনিময়ে আয় ;
(c) কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার বা জেলা পরিষদ বা পঞ্চায়েত সমিতির কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুদান বা অন্য ধরনের আর্থিক সাহায্য ;
(d) কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সংগৃহীত ঋণ ;
(e) কোনো দান থেকে সংগৃহীত অর্থ প্রভৃতি।

9. পঞ্চায়েত সমিতির প্রধান কাজগুলি (Main functions) কি কি?

উত্তর। ব্লক এলাকার বিভিন্ন গ্রাম-পঞ্চায়েতের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করাই পঞ্চায়েত সমিতির প্রধান কাজ। এছাড়া সমিতি স্বাধীনভাবে কৃষি, কুটীর শিল্প, সমবায়, গ্রামীণ ঋণ ব্যবস্থা, জল – সরবরাহ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, প্রাথমিক ও বয়স্ক শিক্ষা ইত্যাদির উপর পরিকল্পনা গ্রহণ ও অর্থ সাহায্য করতে পারে। রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত সমিতিকে অন্য যে কোনো দায়িত্ব অর্পণ করতে পারে। সংকটের সময় ত্রাণ সংগঠন করা সমিতির অন্যতম প্রধান কর্তব্য।

10. পঞ্চায়েত সমিতির গঠনতন্ত্রটি (Structure) লেখ।

উত্তর। পঞ্চায়েত সমিতি গঠিত হয় কয়েক শ্রেণীর সদস্যদের নিয়ে। যেমন
(a) ব্লক এলাকার অন্তর্গত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানগণ পদাধিকারবলে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হন।
(b) ব্লক এলাকা বা তার কোনো অংশ থেকে নির্বাচিত বিধানসভা ও লোকসভার সদস্যগণ এবং ব্লক এলাকায় বসবাসকারী রাজ্যসভার সদস্যগণ সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যপদ পান। তবে কোনো মন্ত্রী পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হতে পারেন না।
(c) ব্লক এলাকার গ্রামগুলি থেকে পঞ্চায়েত সমিতিতে সদস্য নির্বাচিত হন।

11. পঞ্চায়েত সমিতির আয়ের উৎসগুলি (Sources of Income) লেখ ।

উত্তর । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমিতিগুলিকে রাজ্য সরকারের অনুদানের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। যানবাহন, ফেরিঘাট ও জন্তু-জানোয়ারের উপর ধার্য শুল্ক, হাট-বাজারের লাইসেন্স ও যানবাহনের রেজিষ্ট্রি ফী এবং জল সরবরাহ ও পথ আলোকিত করার জন্য ধার্য কর থেকে সমিতিগুলির কিছু আয় হয়। জেলা পরিষদ ও রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত সমিতিকে প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকে।

12. পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাজগুলি (Functions) কি কি?

উত্তর। পঞ্চায়েত সমিতির প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়দায়িত্ব সভাপতির উপর ন্যস্ত থাকে। সভাপতি সমিতির দলিলপত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ যাবতীয় কাগজপত্র সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। রাজ্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত সমিতির সদস্যদের কাজকর্ম তিনি তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ
করেন। সভাপতির উপর অন্য কোনো বিশেষ কাজের দায়িত্বও ন্যস্ত হতে পারে। এ ব্যাপারে পঞ্চায়েত সমিতি বা রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। সভাপতিই হলেন পঞ্চায়েত সমিতির প্রশাসনিক প্রধান। পঞ্চায়েত সমিতির যাবতীয় কাজকর্ম সভাপতির নেতৃত্বেই সম্পাদিত হয়ে থাকে।

13. কি কি কারণে পঞ্চায়েত সমিতির কোনো সদস্য পদচ্যুত (Suspended) হতে পারেন ?

উত্তর। পঞ্চায়েত সমিতির কোনো সদস্য পদচ্যুত হতে পারেন। কতকগুলি কারণের জন্য এই পদচ্যুতির ঘটনা ঘটতে পারে। এই সমস্ত
কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল : দুর্নীতি, ফৌজদারী অপরাধের জন্য ছ-মাসের বেশী কারাদণ্ডভোগ, পঞ্চায়েত সমিতির পরপর তিনটি সভায় বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিতি এবং দেউলিয়া, বিকৃতমস্তিষ্ক প্রভৃতি।

14. গ্রাম পঞ্চায়েতের গঠনতন্ত্রটি (Structure) লেখ।

উত্তর। গ্রাম পঞ্চায়েত ৫-৩০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত গঠিত হবে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে নির্বাচিত
সদস্যগণ এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতি ছাড়া সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের
নিয়ে। পঞ্চায়েত সমিতির যে সমস্ত সদস্য গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হবেন তাঁরা প্রধান বা উপপ্রধানের পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না। তাঁরা কোনো ভোট দিতে পারবেন না বা কর্মকর্তা হতে পারবেন না। মোটামুটি-ভাবে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েত সমিতির তিনটি আসন আছে।

15. গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের যোগ্যতাগুলি (Qualifica(ions) উল্লেখ কর।

উত্তর। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যের যোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি জেলা পরিষদ বা পৌরসভার সদস্য নন : সরকারী
বা কোনো পঞ্চায়েতী সংস্থার কর্মচারী নন; কোনো সমবায়ে বা সরকার পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের বরখাস্ত কর্মচারী নন ; দু-মাসের অধিক
কারাদণ্ডভোগ করেননি এবং দেউলিয়া বা বিকৃত মস্তিষ্ক সম্পন্ন নন এমন কোনো নির্বাচক গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হতে পারবেন। যে ব্যক্তি গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর, মাশুল বা শুল্ক প্রদান করেন নি তিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হতে পারবেন না।

16. গ্রাম পঞ্চায়েতের বিশেষ ক্ষমতাগুলি (Special power) কি কি?

উত্তর। কতকগুলি ক্ষেত্রে গ্রাম পঞ্চায়েতকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
(a) জনকল্যাণ সাধন সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত মিলে একটি যুক্ত কমিটি গঠন করতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতগুলি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন তৈরি করতে পারে।
(b) সরকারী কোনো ভূসম্পত্তির পরিচালনার দায়িত্ব রাজ্য সরকার গ্রাম পঞ্চায়েতের উপর ন্যস্ত করতে পারে।
(c) আবার জেলা পরিষদ কোনো গ্রাম পঞ্চায়েতের সম্মতি সাপেক্ষে তার উপর কোনো কাজের দায়িত্ব ন্যস্ত করতে পারে। তখন জেলা পরিষদ এবং সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত মিলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন প্রণয়ন করে।

17. কি কি কারণে গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরা পদচ্যুত (Suspended) হতে পারেন ?

উত্তর। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরা পদচ্যুত হতে পারেন । মহকুমাশাসক কতকগুলি কারণের জন্য সদস্যদের পদচ্যুত করতে পারেন। এই সমস্ত কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গ্রাম পঞ্চায়েতের পর পর তিনটি সভায় গরহাজির হওয়া ; নীতিবিগর্হিত কাজের জন্য ফৌজদারী আদালত কর্তৃক দু’মাসের বেশী কারাদণ্ড ভোগ ; কর, শুল্ক বা মাশুল বকেয়া রাখা প্রভৃতি।

18. গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের কাজগুলি (Functions) কি কি?

উত্তর। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অর্থনৈতিক বিষয় ও প্রশাসন পরিচালনা করেন। তিনি পঞ্চায়েতের দলিল, নথিপত্র, সীল প্রভৃতি
রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তিনি পঞ্চায়েতের নিজের কর্মচারীদের এবং রাজ্যসরকার কর্তৃক প্রেরিত অফিসার ও কর্মচারীদের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করেন। পঞ্চায়েত কর্তৃক নিযুক্ত কোনো অফিসার বা কর্মচারীকে অপ্রয়োজনীয় মনে করলে তিনমাসের নোটিশ বা তিন মাসের বেতন দিয়ে অব্যাহতি দিতে পারেন প্রধান। আবার অসদাচরণ বা কাজকর্মে গাফিলতির কারণে পঞ্চায়েতের কোনো অফিসার বা কর্মচারীকে প্রধান সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারেন।

19. কে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রথম সভা (Meeting) আহ্বান করেন? প্রধান ও উপপ্রধান কিভাবে নির্বাচিত হন?

উত্তর। ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক (B.D.O.) গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রথম সভা আহ্বান করেন। এই সভায় পঞ্চায়েতের সদস্যগণ নিজেদের মধ্য
থেকে একজনকে প্রধান ও একজনকে উপপ্রধান হিসাবে নির্বাচিত করেন।

20. প্রধানের অনুপস্থিতির (Absence) সময়ে কে কাজকর্ম সম্পাদন করেন ?

উত্তর। প্রধানের অনুপস্থিতির সময়ে উপপ্রধান প্রধানের ক্ষমতা প্রয়োগ ও যাবতীয় কাজকর্ম সম্পাদন করেন। এছাড়া প্রধান লিখিতভাবে যেসব কাজের দায়িত্ব উপপ্রধানের উপর ন্যস্ত করেন তিনি সেইসব কাজও সম্পাদন করেন।

21. গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজের ধরন (types of works) কতরকম ও কি কি?

উত্তর। গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজের ধরন তিন রকম যথা—
(a) কতকগুলি কাজ আছে যার উদ্দেশ্য হল গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের যৌথ জীবনের স্বার্থে কিছু সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করা।
(b) কতকগুলি কাজের উদ্দেশ্য হল গ্রামের অর্থনৈতিক জীবনের উন্নতিসাধন এবং
(c) কতকগুলি কাজের লক্ষ্য হল সামাজিক সুবিচারের নিশ্চয়তা প্রদান।

22. গ্রাম পঞ্চায়েতের বিশেষ ক্ষমতার (Special powers) দুটি ক্ষেত্রের উল্লেখ কর।

উত্তর। গ্রাম পঞ্চায়েতকে কতকগুলি ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যেমন—
(a) সরকারী কোনো ভূসম্পত্তির পরিচালনার দায়িত্ব রাজ্য সরকার গ্রাম পঞ্চায়েতের উপর ন্যস্ত করতে পারে।
(b) জনকল্যাণসাধন সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত মিলে একটি যুক্ত কমিটি গঠন করতে পারে।

23. গ্রাম পঞ্চায়েত কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে (Independ ently) ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে ?

উত্তর। গ্রাম পঞ্চায়েত স্বাধীনভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে যে সমস্ত ক্ষেত্রে সেগুলি হল শিক্ষাস্বাস্থ্য সম্পর্কিত তদারকি কাৰ্য,
উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ, গৃহ-নির্মাণের ব্যাপারে অনুমোদন প্রদান প্রভৃতি।

24. পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের কার্যকাল (Terms) সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।

উত্তর। যাঁরা পদাধিকারবলে সদস্য তাঁরা ছাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সব সদস্যের কাজের মেয়াদ ৬ বছর। এই সমিতির কোনো সদস্য
কার্যকাল শেষ হবার আগেই পদত্যাগ করতে পারেন। আবার তিনি পদচ্যুতও হতে পারেন।

25. কি কি পদ্ধতিতে (Processes) রাজ্য সরকার পঞ্চায়েতী সংস্থানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে?

উত্তর। পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলির উপর প্রশাসনিক তত্ত্বাবধান, প্রতিষ্ঠানগুলি বাতিল ও পুনর্গঠন, কর্মচারীর চাকরী ও কাজকর্মের
শর্তগুলি নির্ধারণ, আর্থিক অনুদান, হিসাব-পরীক্ষা, উচ্চ পদাধিকারীদের অপসারণ প্রভৃতি পদ্ধতিতে রাজ্য সরকার পঞ্চায়েতী সংস্থানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

26. পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কটি মূলনীতির (Principles) ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ও কি কি?

উত্তর। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা তিনটি মূলনীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। যথা—
(a) প্রশাসনিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ,
(b) গ্রামীণ শাসনব্যবস্থার গণতন্ত্রীকরণ এবং
(c) গণশ্রম ও স্ব-নির্ভরতার প্রতিষ্ঠা। 

27. ন্যায় পঞ্চায়েত বলতে কি বোঝায়? কেন ন্যায় পঞ্চায়েতের ব্যবস্থা করা হয়েছে?

উত্তর। বিচার সম্পর্কিত পঞ্চায়েতকেই ন্যায় পঞ্চায়েত বলা হয়। গ্রামবাসীদের কাছে অল্প ব্যয়ে এবং খুব শীঘ্র ন্যায় বিচারকে সুনিশ্চিত
করার জন্যই ন্যায় পঞ্চায়েতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

28. কোন্ কোন্ রাজ্যে ন্যায় পঞ্চায়েত গঠনের ব্যবস্থা আছে?

উত্তর। জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, গুজরাট, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, হিমাচল প্রদেশ, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গে ন্যায় পঞ্চায়েত গঠনের
ব্যবস্থা আছে।

29. ন্যায় পঞ্চায়েতের প্রধান কাজটি (Main function) কি?

উত্তর। বর্তমান পঞ্চায়েত আইনে ন্যায় পঞ্চায়েতের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বিচার সম্পর্কিত কাজই হল ন্যায় পঞ্চায়েতের প্রধান কাজ। গ্রামবাসীদের কাছে স্বল্পব্যয়ে এবং সত্বর ন্যায়বিচারকে সুনিশ্চিত করার জন্য ন্যায় পঞ্চায়েতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ন্যায় পঞ্চায়েত ছোটখাটো দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার বিচার করতে পারে। তবে উল্লেখ্য যে, যেসব বিবাদের সঙ্গে ২৫০ টাকার বা তার থেকে কম পরিমাণ অর্থের প্রশ্ন জড়িত, একমাত্র সেইসব ক্ষেত্রেই ন্যায় পঞ্চায়েত বিচার করতে পারে।

30. ন্যায় পঞ্চায়েতের গঠনতন্ত্রটি (Structure) ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর। পঞ্চায়েত আইন অনুসারে ন্যায় পঞ্চায়েতের সদস্য হবে ৫ জন (পঞ্চায়েত আইনের ৫১নং ধারা)। ন্যায় পঞ্চায়েতের সদস্যদের
বিচারক বলা হয়। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যগণ এঁদের নির্বাচিত করেন।বিচারকগণ নিজেদের ভেতর থেকে একজনকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নির্বাচিত করেন। ন্যায় পঞ্চায়েতের বৈধ অধিবেশনের জন্য অন্ততঃ ৩ জন বিচারপতির উপস্থিতি আবশ্যক। বিচারপতিদের সাধারণ কার্যকাল ৫ বছর।

31. কিভাবে রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে?

উত্তর। পশ্চিমবঙ্গে গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনমূলক সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে। বস্তুতঃ, পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্তরের প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে রাজ্যসরকারের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণমূলক। পঞ্চায়েতী প্রতিষ্ঠানগুলির উপর সরকার বিভিন্নভাবে এই নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলির উপর প্রশাসনিক তত্ত্বাবধান, প্রতিষ্ঠানগুলি বাতিল ও পুনর্গঠন কর্মচারীর চাকরী ও কাজকর্মের শর্তাদি নির্ধারণ, আর্থিক অনুদান, হিসাব পরীক্ষা, উচ্চ পদাধিকারীদের অপসারণ প্রভৃতি নানা উপায়ে রাজ্যসরকার পঞ্চায়েতী সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। 

Leave a Comment

error:
Scroll to Top