আঠারো শতকে নেপাল ও ব্রহ্মদেশ-এর ইতিহাস – আধুনিক যুগের ইতিহাস (History of Nepal and Burma in the eighteenth century)
নেপাল : ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে গুখারা পৃথ্বিনারায়ণের অধীনে নেপাল অধিকার করে। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে গােরক্ষপুর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হলে নেপালের দক্ষিণ সীমানা পর্যন্ত ব্রিটিশ অধিকার বিস্তৃত হয়। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে লর্ড হেস্টিংস বা ময়রা নেপালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করেন। ২ বছর ধরে উভয়ের মধ্যে যুদ্ধ চলে। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সেনাপতি অক্টারলােনি গুর্খা নেতা অমর সিং থাপাকে হারিয়ে মালওন দুর্গ দখল করেন। বহু গুর্খা সৈন্যকে ঘুষ দিয়ে বশীভূত করা হয়। দুপক্ষের মধ্যে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নেপাল সরকার সন্ধি অনুমােদন না করলে অক্টারলােনি নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু অবরােধ করেন। গুর্খা নেতারা ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে সগৌলির সন্ধি স্বাক্ষর করেন।
সন্ধির শর্তানুসারে (a) সিমলা, মুসৌরি, নৈনিতাল ও আলমােড়া পার্বত্য অঞ্চল সহ কুমায়ুন ও গাড়ওয়াল জেলা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।(b) সিকিমে গুর্খা আধিপত্য বিলুপ্ত হয় এবং নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে একজন ব্রিটিশ রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। স্বাধীন রাজ্য সিকিমের সঙ্গে ইংরেজদের এক চুক্তি হয়, এই চুক্তি অনুসারে তরাই অঞ্চলের কিছু অংশ সিকিমের অন্তর্ভুক্ত হয় ও সিকিম এবং ভারতের মধ্যে মিত্ৰতা হয়।
ব্রহ্মদেশ : ব্রহ্মরাজ বােদোপাওয়ার রাজত্বকাল থেকে ইংরেজদের সঙ্গে ব্রহ্মরাজের সংঘর্ষ শুরু হয়। বােদোপাওয়া আরাকান ও মনিপুর জয় করলে ইংরেজরা আপত্তি জানায়। বর্মীরা কোম্পানীর রাজ্যের মধ্যে প্রবেশ করে লুঠতরাজ চালায়। ব্রহ্মরাজ চট্টগ্রাম, ঢাকা, কাশিমবাজার ইত্যাদি স্থানের উপর দাবি জানায়। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মরাজ আসাম জয় করেন এবং ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে শাহপুরী দ্বীপ দখল করেন। লর্ড আর্মহাস্ট আলাপ আলােচনায় ব্যর্থ হয়ে ব্রহ্মদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করেন। ব্রহ্মরাজ পরাস্ত হয়ে ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে ইয়াদাবুর সন্ধি স্বাক্ষর করেন।
সন্ধির শর্তানুসারে (a) আরাকান ও টেনাসিরম ইংরেজদের সমর্পণ করা হয়। (b) আসাম, কাছাড়, জয়ন্তিয়া ও মনিপুরের উপর ব্রহ্মরাজ তার দাবি ত্যাগ করেন। (c) ব্রহ্মরাজ যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ স্বরূপ কোম্পানিকে ১ কোটি টাকা দিতে সম্মত হন এবং উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে কাছাড় ও ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে জয়ন্তিয়া এবং লর্ড অকল্যান্ড আসামের বাকি অংশ ইংরেজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। ব্ৰহ্মদেশের নতুন রাজা থরওয়াদি ইয়ান্দাবুর সন্ধি অস্বীকার করেন। লর্ড ডালহৌসী কম্বােডাের ল্যাম্বার্ট নামে জনৈক কর্মচারীকে রণতরী সহ ব্রহ্মদেশে পাঠান। ডালহৌসী ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ইঙ্গ ব্রহ্মা যুদ্ধ শুরু করেন। ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে মার্চ মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। ইংরেজপক্ষ যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং সমগ্র দক্ষিণ ব্রহ্মা ব্রিটিশ অধিকারে আসে।