ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকার ও কর্তব্যসমূহ | Fundamental Rights and Duties in Indian Constitution
1. মৌলিক অধিকার বলতে কী বােঝায়?
উত্তর: নাগরিকগণের ব্যক্তিত্ব বিকাশের পক্ষে অপরিহার্য কতকগুলি অধিকার পৃথিবীর প্রায় সব রাষ্ট্রেই স্বীকৃত হয়েছে। জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার প্রভৃতি এই শ্রেণীর অধিকারের পর্যায়ভুক্ত। এই অধিকারগুলিকে মৌলিক অধিকার (Fundamental Rights) বলে অভিহিত করা হয়। মৌলিক অধিকার হল রাষ্ট্র ও ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে আইনগতভাবে বলবৎযােগ্য অধিকার।
2. ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারের (Fundamental Rights) বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। এইগুলি হল :(a) স্বাভাবিক সময়ে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে তার প্রতিকারের জন্য নাগরিক আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে।(b) মৌলিক অধিকারগুলি অবাধ বা নিরঙ্কুশ নয়।(c) মৌলিক অধিকারগুলির উপর বাধানিষেধ আরােপ করার যে ক্ষমতা রাষ্ট্রের উপর অর্পিত হয়েছে তা বিশেষ ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী।
3. ভারতীয় সংবিধানভুক্ত অধিকারগুলিকে কটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে?
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানভুক্ত অধিকারগুলিকে দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। (a) মৌলিক অধিকার (Fundamental Rights) এবং (b) রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি (Directive Principles of State Policy)। এই দুই শ্রেণীর মধ্যে মূল পার্থক্য হল যে, মৌলিক অধিকারগুলি আদালত কর্তৃক বলবৎযােগ্য, কিন্তু নির্দেশমূলকনীতিগুলিকেবলবৎ করার ক্ষমতা আদালতের নেই।
4. অধিকার সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি কি কি ?
উত্তর: স্বাধীনতা ও অধিকার সংরক্ষণের জন্য সাধারণত যে সব পন্থা নির্দেশ করা হয় তার মধ্যে আছে আইনের অনুশাসন, ক্ষমতা-স্বতন্ত্রীকরণ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সংবিধানে অধিকারের ঘােষণা ইত্যাদি।
5. ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলি কত প্রকার ?
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় পরিচ্ছেদে (Part-III) মৌলিক অধিকারগুলি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই অধিকারগুলিকে ছ-টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। যথা—(a) সাম্যের অধিকার, (b) স্বাধীনতার অধিকার, (c) শােষণের বিরুদ্ধে অধিকার, (d) ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার, (e) সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার এবং (f) শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানেরঅধিকার।
6. ভারতীয় সংবিধানে কেন মৌলিক অধিকার প্রদত্ত হয়েছে?
উত্তর: সংবিধানে মৌলিক অধিকার ঘােষণা করার কয়েকটি কারণ হল-(a) সংবিধানে অধিকার লিপিবদ্ধ থাকলে জনগণও জানতে পারে তাদের অধিকার কি কি এবং আর এইসব অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকে। (b) নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি সংবিধানে লিপিবদ্ধ করলে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে সার্থক করে তােলার পথ সুগম হয়। (c) সংবিধানে অধিকার লিপিবদ্ধ না থাকলে এইসব অধিকার আইন ও শাসনবিভাগ দ্বারা ক্ষুন্ন হতে পারে।
7. কেন কিছুসংখ্যক অধিকারকে মৌলিক অধিকার বলা হয়?
উত্তর: বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক যে সব অধিকার ভােগ করে তার মধ্যে কতকগুলিকে মৌলিক অধিকার বলা হয়। এই অধিকারগুলিকে মৌলিক অধিকার বলা হয়। কারণ, এই অধিকার মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের পক্ষে অপরিহার্য। এগুলি ছাড়া ব্যক্তির পক্ষে ব্যক্তিত্বের স্ফুরণ করা, তার সুপ্ত সম্ভাবনাকে বিকশিত করে তােলা সম্ভব নয়। মৌলিক অধিকারগুলি আদালতে বলবৎযােগ্য।
৪. তুমি কি মনে করাে মৌলিক অধিকারগুলি অবাধ ?
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারগুলি অবাধ বা নিরঙ্কুশ নয়। প্রকৃতপক্ষে, কোনাে অধিকারই অবাধ ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত হতে পারে না, কারণ অধিকার অবাধ হলে সামাজিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সকলে যাতে সমানভাবে অধিকারগুলি ভােগ করতে পারে সেইজন্য অধিকারের উপর রাষ্ট্র যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরােপ করে থাকে।
9. ভারতীয় সংবিধানের ১৪নং ধারাটি লেখ।
উত্তর: সংবিধানের ১৪নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “ভারতের ভূখণ্ডের মধ্যে কোনাে ব্যক্তিকে রাষ্ট্র আইনের দৃষ্টিতে সাম্য অথবা আইনসমূহ দ্বারা সমানভাবে সংরক্ষিত হবার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না।” এই অনুচ্ছেদে উল্লিখিত অধিকার দুটি হল—আইনের দৃষ্টিতে সমতার অধিকার এবং আইনসমূহের দ্বারা সমানভাবে সংরক্ষিত হবার অধিকার।
10. ভারতীয় সংবিধানে ১৫নং ধারাটি কিভাবে বর্ণিত হয়েছে?
উত্তর: সংবিধানের ১৫নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র কোনাে নাগরিকের প্রতি কেবলমাত্র জাতি, ধর্ম, বর্ণ, জন্মস্থান বা নারী-পুরুষ ভেদে পৃথক আচরণ করতে পারবে না। কোনাে নাগরিক আবার উপরিউক্ত কারণগুলির কোনােটির জন্য দোকান, সাধারণের ব্যবহার্য রেস্তোরাঁ, হােটেল এবং সরকারী অর্থে পরিচালিত কূপ, পুষ্করিণী, স্নানাগার বা সমাগম স্থানের ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না।
11. ভারতীয় সংবিধানে ১৬নং ধারাটি কিভাবে ব্যাখ্যাত হয়েছে?
উত্তর: সংবিধানের ১৬নং অনুচ্ছেদে সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে সকলের সমান সুযােগ ও সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে। জাতি, ধর্ম, স্ত্রী, পুরুষ,বর্ণ, বংশ ও জন্মস্থান ইত্যাদি বিষয়ে পার্থক্য থাকলেও কেবলমাত্র এই কারণগুলির পরিপ্রেক্ষিতে কোনাে ব্যক্তি সরকারী চাকরীলাভের অযােগ্য বলে বিবেচিত হবে না। আবার এইসব কারণের ভিত্তিতে রাষ্ট্রকোনাে নাগরিকের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না।
12. ভারতীয় সংবিধানে ১৭নং ধারাটি কিভাবে বর্ণিত হয়েছে?
উত্তর: সংবিধানের ১৭নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধ করা হল। অস্পৃশ্যতার সাথে জড়িত যে-কোনাে আচরণ দণ্ডণীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। অস্পৃশ্যতার অজুহাতে কোনাে ব্যক্তিকে অযােগ্য বলে কোনাে অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে তা আইনানুসারে দণ্ডণীয় হৱে। এই উদ্দেশ্যে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ‘অস্পৃশ্যতা-সংক্রান্ত অপরাধ আইন পাস করা হয়েছে।
13. ভারতীয় সংবিধানে ১৮নং ধারাটি কিভাবে বর্ণিত হয়েছে ?
উত্তর: সংবিধানের ১৮নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, বিদ্যাবিষয়ক বা সামরিক খেতাব ভিন্ন রাষ্ট্র অন্য কোনাে খেতাব দান করতে পারবে না। আবার বৈদেশিক কোনাে রাষ্ট্রের নিকট থেকে ভারতীয় নাগরিকগণ কোনাে খেতাব গ্রহণ করতে পারবে না। সরকারী খেতাব জনগণের মধ্যে কৃত্রিম শ্রেণী বৈষম্যের সৃষ্টি করে বলে ইহা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সাথে বিশেষ অসংগতিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
14. ভারতীয় সংবিধানের ১৯নং ধারাটি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর: মূল সংবিধানের ১৯নং অনুচ্ছেদে সাত প্রকার স্বাধীনতার অধিকারের উল্লেখ ছিল। পরে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ৪৪তম সংশোধন গৃহীত হওয়ায় এই অধিকারগুলির সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ছ-প্রকার অধিকারে এসে দাঁড়ায়। যথা—(a) বাকস্বাধীনতা; (b) শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্রভাবে সমবেত হবার অধিকার; (c) সমিতি বা ইউনিয়ন গঠনের অধিকার; (d) ভারতের সর্বত্র স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার; (e) ভারতের যে কোনাে স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপনের অধিকার; এবং (f) যে কোনাে বৃত্তি অবলম্বন করার অধিকার।
15. ভারতীয় সংবিধানে ২০নং ধারাটি সম্পর্কে লেখ।
উত্তর: ২০নং অনুচ্ছেদে, সংবিধানে বলা হয়েছে অপরাধ ও অপরাধী সংক্রান্ত তিনটি অধিকারের কথা। অপরাধ যে সময়ে করা হয় সেই সময়কার প্রচলিত আইন অনুসারে যে শাস্তি দেওয়া যেত, তার অধিক শাস্তি অপরাধীকে দেওয়া যাবে না। আবার একজন ব্যক্তিকে একই অপরাধের জন্য একাধিকবার শাস্তিও দেওয়া যাবে না। এই অনুচ্ছেদে আরাে বলা হয়েছে যে, কোনাে ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না।
16. ভারতীয় সংবিধানের ২১নং ধারাটি কিভাবে বর্ণিত হয়েছে?
উত্তর: সংবিধানের ২১নং অনুচ্ছেদে জীবনের নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উল্লেখ করা হয়েছে। আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি ব্যতীত কোনাে ব্যক্তিকে তার জীবন বা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি’ কথাটির অর্থ হল আদালত শুধু বিচার করবে যে, যে পদ্ধতিতে কোনাে ব্যক্তির স্বাধীনতার অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে, তা কোনাে বিধিবদ্ধ বা বৈধ আইন অনুসারে করা হয়েছে কিনা।
17. ভারতীয় সংবিধানের ২২নং ধারাটি সম্পর্কে লেখাে।
উত্তর: সংবিধানের ২২নং অনুচ্ছেদে গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে কয়েকটি অধিকারের উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, কাউকে যথাসম্ভব শীঘ্র কারণ না দেখিয়ে গ্রেপ্তার করে আটক রাখা যাবে না। আটক ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের এবং নিজ পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ করার অধিকার থাকবে।
18. ভারতীয় সংবিধানের ২৩নং ধারাটি উল্লেখ করাে।
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানের ২৩(১) নং ধারা অনুসারে কাউকে বিনাপারিশ্রমিকে বা বাধ্যতামূলকভাবে বেগার খাটানাে যাবে না। কিন্তু ২৩(২) ধারা অনুসারে জাতীয় স্বার্থে যে-কোনাে ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলকভাবে কেনার খাটানাে রাষ্ট্র ভােগ করে।
19. ভারতীয় সংবিধানের ২৪নং ধারাটি সম্পর্কে আলােচনা কর।
উত্তর: সংবিধানের ২৪নং অনুচ্ছেদে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে ১৪ বছরের কমবয়স্ক শিশুদিগকে কোনাে কারখানা, খনি বা অন্য কোনাে বিপজ্জনক কাজে নিযুক্ত করা যাবে না। এই অনুচ্ছেদটি সংবিধানে বর্ণিত নির্দেশমূলক নীতির সাথে সম্পর্কিত। নির্দেশমূলক নীতির একস্থানে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র এমন নীতি গ্রহণ করবে যার ফলে শিশু ও যুবকদের যেন শােষণ, নৈতিক ও বাস্তব দুর্গতি থেকে রক্ষা করা যায়।
20. ভারতীয় সংবিধানে ২৫নং ধারাটি কিভাবে বর্ণিত হয়েছে?
উত্তর: সংবিধানের ২৫নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার অনুসারে সব ব্যক্তিরই বিবেকের স্বাধীনতা এবং ধর্মবিশ্বাস, ধর্মানুষ্ঠান ও ধর্মপ্রচারের স্বাধীনতা থাকবে। ভারতের নাগরিক ও ভারতে বসবাসকারী বিদেশীরা সংবিধান প্রদত্ত এই অধিকারের সুযােগ লাভ করবে। ধর্মীয় অনুশাসন অনুসারে বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান পালন করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকেরই আছে।
21. ভারতীয় সংবিধানে ২৬নং ধারাটি কিভাবে ব্যাখ্যাত হয়েছে?
উত্তর: সংবিধানের ২৬নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রত্যেক ধর্মসম্প্রদায় (a) ধর্ম ও দানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও রক্ষা করার, (b) নিজ নিজ কর্মবিষয়ক কার্যাবলীর ব্যবস্থা করার, (C) স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন করার ও মালিক হবার এবং (d) আইনানুসারে ঐ সম্পত্তি পরিচালনা করার অধিকার ভােগ করবে। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, এই অধিকারগুলি অবাধ বা নিরঙ্কুশ নয়। অধিকারগুলি রাষ্ট্রের দ্বারানিয়ন্ত্রিত।
22. ভারতীয় সংবিধানে ২৭নং ধারাটি কিভাবে বর্ণিত হয়েছে?
উত্তর: সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, কোনাে বিশেষ ধর্ম বা ধর্মসম্প্রদায়ের উন্নতি অথবা সংরক্ষণের জন্য কোনাে ব্যক্তিকে কোনােপ্রকার কর প্রদান করতে বাধ্য করা যাবে না। ধর্মসংক্রান্ত ব্যাপারে রাষ্ট্র যাতে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে চলে এবং বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায় যাতে জোর করে নিজেদের মতামত বা বিশ্বাস একে অপরের উপর চাপিয়ে দিতে না পারে সেজন্য সংবিধানে উপরিউক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
23. ভারতীয় সংবিধানে ২৮নং ধারাটি কিভাবে ব্যাখ্যাত হয়েছে?
উত্তর: সংবিধানের ২৮নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, সম্পূর্ণভাবে সরকারী অর্থ দ্বারা পরিচালিত কোনাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মশিক্ষা দেওয়া যাবে না এবং ধর্মমূলক উপাসনায় যােগদান করতে কাউকে বাধ্য করা যাবে না। ধর্মীয় শিক্ষায় যােগদানকারী ব্যক্তি নাবালক বা নাবালিকা হলে তাদের অভিভাবকদের সম্মতি আগেই গ্রহণ করতে হবে।
24. ভারতীয় সংবিধানের ২৯নং ধারাটি সম্পর্কে একটি টাকা লেখ।
উত্তর: সংবিধানের ২৯নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ভারত কোনাে অঞ্চলের অধিবাসীদের যদি নিজস্ব ভাষা, লিপি ও সংস্কৃতি থাকে, তবে সেই ভাষা, লিপি ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ করার অধিকার সেই অপরের অধিবাসীরা ভােগ করবে। সরকার পরিচালিত বা সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেবলমাত্র ধর্ম, বংশ, বর্ণ বা ভাষার জন্য কাউকে প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
25. ভারতীয় সংবিধানে ৩০নং ধারাটি কিভাবে ব্যাখ্যাত হয়েছে?
উত্তর: সংবিধানের ৩০নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ধর্মভিত্তিক বা ভাষাভিত্তিক উভয় প্রকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের পছন্দমতাে শিক্ষায়তন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করার অধিকার ভােগ করবে। কোনাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দ্বারা পরিচালিত, কেবলমাত্র এই কারণে সরকারী সাহায্যের ব্যাপারে এদের প্রতি প্রভেদমূলক আচরণকরা যাবে না।
26. ভারতীয় সংবিধানের ৩২নং অনুচ্ছেদে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানের ৩২নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, সুপ্রীমকোর্ট, মৌলিক অধিকারকে বলবৎ করার জন্য বন্দীপ্রত্যক্ষীণ (habeas corpus), পরমাদেশ (mandamus), প্রতিষেধ (prohibition), অধিকারপৃচ্ছা (quowarranto) এবং উৎপ্রেষণ (certiorari) এই পাঁচ ধরনের লেখ, আদেশ বা নির্দেশ জারী করতে পারে। সংবিধানের ২২৬নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, মহাধর্মাধিকরণগুলিরও এইসব লেখ, আদেশ বা নির্দেশ জারী করার ক্ষমতা আছে।
27. কি কি কারণে রাষ্ট্র বাস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর বাধানিষেধ আরােপ করতে পারে ?
উত্তর: যে সব কারণে বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর বাধানিষেধ আরােপের ক্ষমতা রাষ্ট্রকে দেওয়া হয়েছে সেগুলি হল—(a) ভারতের সার্বভৌমিকতা ও সংহতি রক্ষা, (b) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, (C) বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, (d) জনশৃঙ্খলা, (e) সৌজন্য বা নীতিবােধ, (f) আদালতের অবমাননা, (g) মানহানি এবং (h) অপরাধ করতে প্ররােচনা দান।
28. ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের উপর রাষ্ট্র কি কি কারণে বাধানিষেধ আরােপ করতে পারে ?
উত্তর: ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের উপর রাষ্ট্র প্রধানত তিনটি কারণে বাধানিষেধ আরােপ করতে পারে। যথা—জনশৃঙ্খলা, নীতিবােধ ও জনস্বাস্থ্য। কোনাে নাগরিক যদি এই তিনটি বিষয়ের বিরােধী কোনাে কিছু না করে তাহলে তার ধর্মমত পােষণের স্বাধীনতা থাকবে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, কোনাে ধর্ম যদি সমাজসংস্কারের পথে বাধার সৃষ্টি করে, তবে সেই ধর্মকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রাষ্ট্রের আছে।
29. ভারতীয় নাগরিকদের দুটি কর্তব্যের কথা উল্লেখ কর।
উত্তর: ভারতীয় নাগরিকদের দুটি মৌলিক কর্তব্য হল :(a) সংবিধানকে মান্য করতে হবে এবং সংবিধানের আদর্শ, প্রতিষ্ঠানসমূহ, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে।(b) ভারতের সার্বভৌমিকতা, ঐক্য ও সংহতিকে সমর্থন ও সংরক্ষণ করতে হবে।
30. তুমি কি মনে করাে যে, অধিকার ও কর্তব্য পরস্পর সংযুক্ত?
উত্তর: কর্তব্য পালন ছাড়া অধিকার ভােগ করা যায় না। কর্তব্যহীন অধিকার দায়িত্বহীনতা, আলস্য প্রভৃতিকে প্রশ্রয় দেয়। আবার কর্তব্যই হল ভারতীয় রাষ্ট্রদর্শনের মূল কথা। এছাড়া সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি ভারতের ঘােষিত অঙ্গীকারের কথাও সুবিদিত। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই মৌলিক অধিকার ও মৌলিক কর্তব্যের পাশাপাশি অবস্থান দেখা যায়। এই সমস্ত কারণে ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক কর্তব্যগুলি সংযুক্ত হয়েছে।
31. ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক কর্তব্যগুলির সীমাবদ্ধতা কি?
উত্তর: মৌলিক কর্তব্যগুলি হল নির্দেশমূলক নীতিগুলির মতাে নাগরিকদের প্রতি সংবিধানের সাধারণ নির্দেশমাত্র। কর্তব্য পালন না করলে শাস্তি প্রদানের ব্যাপারে প্রয়ােজনীয় আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত সুপারিশ স্বরণ সিং কমিটির প্রতিবেদনে ছিল। কিন্তু সরকার ৪২তম সংবিধান সংশােধনী আইনে তা গ্রহণ করেনি। মৌলিক কর্তব্যগুলি অমান্য করলে তার জন্য কোনাে আইনগত ব্যবস্থার কথা সংবিধানে বলা হয়নি।
32. ভারতের সংবিধানের সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কি কি অধিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ?
উত্তর: ভারতের সংবিধানে বিশেষ সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, খেতাবের বিলুপ্তি প্রভৃতি অধিকারগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
33. ভারতীয় সংবিধানের ১৪নং ধারায় কতরকম সাম্যের কথা বলা হয়েছে ও কি কি ?
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানের ১৪নং ধারায় দুই রকম সাম্যের কথা বলা হয়েছে। যথা—(a) আইনের দৃষ্টিতে সাম্য এবং (b) আইনের সমান সংরক্ষণ।
34. ভারতীয় সংবিধানের কত খ্রিস্টাব্দের এবং কততম সংশােধনী আইনে নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানের ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ৪২তম সংশােধনী আইনের চতুর্থ অধ্যায়ে নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে।
35. ভারতীয় সংবিধানের কোন্ অধ্যায়ে এবং কোন ধারায় মৌলিক অধিকারগুলি লিপিবদ্ধ আছে?
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে ১২—৩৫নং ধারার মধ্যে মৌলিক অধিকারগুলি লিপিবদ্ধ আছে।
36. মূল সংবিধানে নাগরিকদের কয়টি মৌলিক অধিকার ছিল এবং কোন্ সংশােধন দ্বারা একটি মৌলিক অধিকারকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: মূল সংবিধানে ৭টি মৌলিক অধিকারের উল্লেখ ছিল। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ৪৪তম সংবিধান সংশােধন দ্বারা সম্পত্তির অধিকারকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
37. ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত কোন্ অধিকারগুলি নাগরিক ও অ-নাগরিক উভয়েই ভােগ করতে পারবে?
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত আইনের চোখে সমানাধিকার, জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার প্রভৃতি অধিকারগুলি নাগরিক ও অ-নাগরিক (বিদেশী) সকলেই ভােগ করতে পারে।
38. সাধারণ অধিকারের সাথে মৌলিক অধিকারের দুটি পার্থক্য উল্লেখ কর।
উত্তর: সাধারণ অধিকারের সাথে মৌলিক অধিকারের পার্থক্যগুলি হল :(a) মৌলিক অধিকার আইন ও শাসনবিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত কিন্তু অন্যান্য অধিকার তা নয়।(b) মৌলিক অধিকারগুলি আদালত কর্তৃক বলবৎযােগ্য কিন্তু অন্যান্য অধিকারগুলি তা নয়।
39. গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার মূল ভিত্তি কি কি? মৌলিক অধিকারের কয়েকটি উদাহরণ লেখ।
উত্তর: গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার মূল ভিত্তি হল মৌলিক অধিকার। মৌলিক অধিকারের কয়েকটি উদাহরণ হিসাবে জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়।
40. ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারগুলির মধ্যে কোন অধিকারগুলি শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকরাই ভােগ করতে পারবে?
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারগুলির মধ্যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চাকরীর ক্ষেত্রে সমানাধিকার, সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার, ভারতের যে কোনাে জায়গায় যাতায়াত ও বসবাসের অধিকার, সমিতি গঠনের স্বাধীনতা প্রভৃতি অধিকারগুলি শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকরাই ভােগ করতে পারবে।
41. অধ্যাপক ডাইসা আইনের দৃষ্টিতে সাম্য বলতে কি বুঝিয়েছেন?
উত্তর: অধ্যাপক ডাইসার মতে, আইনের দৃষ্টিতে সাম্য বলতে বােঝায় মর্যাদা ও অবস্থা নির্বিশেষে গেনাে ব্যক্তিই দেশের আইনের উর্ধ্বে নয়। সব ব্যক্তিই, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলেই দেশের সাধারণ আইনের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং সাধারণ আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত।
42. শাস্তিমূলক আটক ও নিবর্তনমূলক আটক কাকে বলে?
উত্তর: আইন অমান্য বা অপরাধ অনুষ্ঠানের জন্য কোনাে ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও আটক করলে তাকে শাস্তিমূলক আটক বালে। আইন অমান্য বা অপরাধ করতে পারে এই আশঙ্কা করে কোনাে ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও আটক করা হলে সেই আটককে নিবর্তনমূলক আটক বলে।
43. নিবর্তনমূলক আটক আইনের পক্ষে যুক্তি লেখ।
উত্তর: নিবর্তনমূলক আটক আইনের পক্ষে যুক্তিগুলি হল :(a) এই আইনের ভিত্তিতে সরকার যাতে স্বৈরাচারী হতে না পারে তার জন্য সংবিধানে প্রয়ােজনীয় বিধিনিষেধের উল্লেখ আছে।(b) ড. আম্বেদকরের মতে আইনের সমর্থনই নিবর্তনমূলক আটক আইনের শ্রেষ্ঠ রক্ষা কবচ।
44. সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোর্ট অধিকারগুলি বলবৎ করার জন্য কটি লেখ’ জারী করতে পারে ও কি কি?
উত্তর: সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোর্ট অধিকারগুলি বলবৎ কার জন্য পাঁচটি লেখ জারী করতে পারে। যথা—বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ, প্রতিরােধ, অধিকারপচ্ছা ও উৎপ্রেষণ।
45. লেখ বা writ বলতে কি বােঝায়?
উত্তর: লেখ বা writ বলতে বােন্মায় আদেশ, নির্দেশ বা পরােয়ানা।
46. বন্দীপ্রত্যক্ষীকরণ-এর উদ্দেশ্য কি? ‘হ্যাবিয়াস করপাস’-এর অর্থ কি?
উত্তর: বন্দীপ্ৰত্যক্ষীণের উদ্দেশ্য হল বে-আইনীভাবে বা বৈধ কারণ ছাড়া আটক ব্রা ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া। এর দ্বারা অন্যায়কারীর শাস্তির ব্যবস্থা করা যায় না। হ্যাবিয়াস পাস’-এর অর্থ হল সশরীরে হাজির করা।
47. ‘প্রতিষেধ’-এর অর্থ কি? এই লেখটি কখন ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: প্রতিষেধের অর্থ হল নিষেধ করা। উর্ধতন আদালতের নিম্নতন আদালতের নিজ সীমার মধ্যে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়ার জন্য এই লেখ জারী করে।
48. ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক কর্তব্যগুলির উল্লেখ কর।
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক কর্তব্যগুলি হল—
(a) সংবিধানকে মান্য করতে হবে এবং সংবিধানের আদর্শ, প্রতিষ্ঠানসমূহ, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে।
(b) যেসব মহান আদর্শ দেশের স্বাধীনতার জন্য জাতীয় সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছিল, সেগুলিকে পােষণ ও অনুসরণ করতে হবে।
(c) ভারতের সার্বভৌমিকতা, ঐক্য ও সংহতিকে সমর্থন ও সংরক্ষণ করতে হবে।
(d) দেশরক্ষা ও জাতীয় সেবাকার্যে আত্মনিয়ােগের জন্য আহত হলে সাড়া দিতে হবে।
(e) জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা ও হিংসার পথ পরিহার করতে হবে।
(f) বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী, মানবিকতাবােধ, অনুসন্ধিৎসা, সংস্কারমূলক মনােভাবের প্রসারসাধন করতে হবে।
(g) আমাদের দেশের মিশ্র সংস্কৃতির (composite culture) গৌরবময় ঐতিহ্যকে মূল্যপ্রদান ও সংরক্ষণ করতে হবে।
(h) বনভূমি, হ্রদ, নদী, বন্যপ্রাণীসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের সংরক্ষণ ও উন্নতি এবং জীবজন্তুর প্রতি মমত্ববােধ প্রকাশ করতে হবে।
(i) সবক্ষেত্রে জাতীয় উন্নতির উৎকর্য বজায় রাখার জন্য ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সব কাজে চরম উৎকর্ষের জন্য সচেষ্ট হতে হবে।
(j) ধর্মগত, ভাষাগত, অঞ্চলগত বা শ্রেণীগত বিভেদের উদ্ধে থেকে সমস্ত ভারতবাসীর মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববােধকে সম্প্রসারিত করতে হবে এবং নারীজাতির মর্যাদা হানিকর সব প্রথাকে পরিহার করতে হবে।
(k) ২০০২ খ্রিস্টাব্দে ৮৬তম সংশােধনী আইনে বলা হয়েছে ৬-১৪ বছর বয়সের প্রত্যেক শিশুকে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এটি হল পিতামাতা ও অভিভাবকের মৌলিক কর্তব্য।