ব্রিটিশ শাসনের প্রশাসনিক ভিত্তি (Administrative Basis of British Rule)
ব্রিটিশ শাসনকালে শিক্ষা-ব্যবস্থা
১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়ারেন হেস্টিসের উদ্যোগে। ১৭১২ খ্রিস্টাব্দে বারাণসিতে সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন জোনাথন ডানকান। ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে এশিয়াটিক সােসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন স্যার উইলিয়াম জোনস। স্যার উইলিয়াম জোনস্ ছিলেন কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। এশিয়াটিক সােসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয় প্রাচ্য শিক্ষা সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ ও উন্মেষ ঘটানাের জন্য। ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভারতীয়রা এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে মার্শম্যান, ওয়ার্ড ও উইলিয়াম কেরী শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে রামমােহন রায় অ্যাংলাে হিন্দু স্কুল নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন কলকাতায়। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় বিচারপতি হাইড ইস্ট এবং ভারতীয়দের উদ্যোগে। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু কলেজের নাম হয় প্রেসিডেন্সি কলেজ। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার হেয়ার স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ডেভিড হেয়ার। তিনি ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা স্কুলবুক সােসাইটি স্থাপন করেন, ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা স্কুল সােসাইটি স্থাপন করেন। ডেভিড হেয়ার পেশায় ছিলেন ঘড়ি বিক্রেতা। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ডের ধর্মপ্রচারক আলেকজান্ডার ডাফ জেনারেল অ্যাসেম্বলীজ ইন্সটিটিউশান স্থাপন করেন। এটির পরবর্তীকালে নাম হয় স্কটিশ চার্চ কলেজ।
১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে কমিটি অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন বা জনশিক্ষা কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় ১ লক্ষ টাকা প্রাচ্য শিক্ষা ব্যয় করা হবে। কিন্তু রামমােহন রায় প্রাচ্য শিক্ষায় অর্থ বরাদ্দের বিরুদ্ধে লর্ড আমহাস্টকে পত্র লেখেন। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব শুরু হয়, প্রাচ্যবাদীদের পক্ষে ছিলেন জেমস সাদারল্যান্ড, জন শেকসপীয়ার, জেমস এবং হেনরী প্রিন্সেপ ও এলিয়ট মাজাটেন। পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে ছিলেন ডব্লুডব্লু-বার্ড, সি.বি. সৌন্দর, জে হার, কোলভিন, সি. ই. ট্রিবলিন, জি. এ. বুশি। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ২ মার্চ উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ইংরাজিকে সরকারি ভাষা হিসাবে ঘােষণা করেন ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে লর্ড হার্ডিঞ্জ ঘােষণা করেন যে ইব্রাজি জানা ছাত্রদেরই সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় লর্ড আর্মহাষ্টের উদ্যোগে। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। রকিতে থমন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি হাইস্কুল এবং বম্বেতে এলফিনস্টোন ইন্সটিটিউশন স্থাপিত হয়। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে শর্সি ভাষার পরিবর্তে উচ্চ আদালতে ইংরাজি ভাষা ও নিম্ন আদালতে স্থানীয় ভাষার ব্যবহার শুরু হয়। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষাক্ষেত্রে উডের ডেসপ্যাচ বা শিক্ষাসংক্রান্ত এক নির্দেশনামা প্রকাশিত হয়। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে প্রত্যেক প্রদেশে জনশিক্ষা দপ্তর স্থাপন করেন ডালহৌসি। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারী মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, জুলাইয়ে বােম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেপ্টেম্বর মাসে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হয়। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় শিক্ষা সার্ভিস চালু হয়। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে লর্ড রিপন, উরু উরু হান্টারের নেতৃত্বে হান্টার কমিশন গঠন করেন। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে থােমাস র্যালে কমিটি গঠিত হয়। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয়। র্যালে কমিটির অপর দুজন ভারতীয় সদস্য ছিলেন সৈয়দ হুসেন বিলগ্রামী এবং বিচারপতি গুরুদাস ব্যানার্জি।
১৯১৭-১৯ খ্রিস্টাব্দে লর্ড চেমসফোর্ড স্যাডলার কমিশন নিয়ােগ করেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ১২। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে ইন্টার ইউনিভার্সিটি বাের্ড গঠন হয়। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতে শিক্ষার উন্নতির জন্য স্যার ফিলিপ জোসেফ হর্টগ কমিটি নিয়ােগ করা হয়। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ওয়ার্ধা স্কীল এডুকেশান প্রবর্তিত হয়, যার নাম বেসিক এডুকেশান বা নৈ-তালিম। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে হরিজন পত্রিকায় গান্ধিজি বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার কথা লেখেন। জাতীয় শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ড. জাকির হুসেন ছিলেন এই সম্মেলনের সভাপতি। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে স্যার জে.পি. সার্জেন্টের নেতৃত্বে সার্জেন্ট কমিশন গঠিত হয়। এই কমিশনের রিপাের্টে ৩ থেকে ৬ বছরের শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এবং ৬-১৪ বছরের শিশুদের জন্য সার্বজনীন বাধ্যতামূলক ফ্রি প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলা হয়। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে রাধাকৃষ্ণণ কমিটি গঠিত হয়। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশন (UGC) গঠিত হয়। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে কোঠারী কমিশন গঠিত হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষাকে যুগ্ম তালিকায় আনা হয়। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি ঘােষিত হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন জেমস উইলিয়ম কোলভিল। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলারা প্রথম পরীক্ষা দেবার সুযােগ পায়। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার দুই মহিলা চন্দ্রমুখী বসু ও কাদম্বীনি গাঙ্গুলি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. ডিগ্রী লাভ করেন। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে ফিমেল জুভেনাইল সােসাইটি এবং ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে লেডিজ সােসাইটি ফর নেটিভ ফিমেল এডুকেশান স্থাপিত হয়।
ব্রিটিশ শাসনকালে বিচার-ব্যবস্থা
ওয়ারেন হেস্টিংস দেওয়ানি আদালত ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন করেন জেলা স্তরে। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে হেস্টিংসে সুদর দেওয়ানি আদালত কলকাতাতে নিয়ে যান। লর্ড কর্নওয়ালিশ ১৩টি জেলা কোর্ট স্থাপন করেন। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় হাইকোর্ট আইন পাশ হয়। হাইকোর্টগুলি ১জন প্রধান বিচারপতি সহ ১৫ জন বিচারপতি নিয়ে গঠিত হত। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদ হাইকোর্ট স্থাপিত হয় উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের জন্য। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীতে গঠিত ফেডারেল কোর্ট ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে সুপ্রিম কোর্টে রূপান্তরিত হয়।
ব্রিটিশ শাসনকালে সিভিল সার্ভিস
১৮০০ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়েলেসলি কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপন করেন নবনিযুক্ত সিভিল সার্ভেন্টদের প্রাচ্য দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি ইতিহাস ও ধর্মীয় ব্যাপারে সচেতন করে গড়ে তােলার জন্য। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের হেইলিবেরিতে ইষ্ট ইন্ডিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় তরুণ অফিসারদের দুবছর ট্রেনিংয়ের জন্য। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার আইনের দ্বারা সিভিল সার্ভিস চালু হয়। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষার সিভিল সার্ভেন্টদের নিয়ােগের ব্যবস্থা হয়। ইংল্যান্ডে এই পরীক্ষা হত। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় বাের্ড অফ কন্ট্রোলের তত্ত্বাবধানে। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে হেইলিবেরী কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে বিধিবদ্ধ সিভিল সার্ভিসকে দুভাগ ভাগ করা হয়। প্রথমটি চুক্তিবদ্ধ সিভিল সার্ভিস (Covenant Civil Service) অন্যটি অ- চুক্তিবদ্ধ সিভিল সার্ভিস। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে সিভিল সার্ভিস পরিচিতি লাভ করে ভারতীয় সিভিল সার্ভিস বা ICS নামে। বিধিবদ্ধ সিভিল সার্ভিসের এক পঞ্চমাংশ পূরণ করা হত শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের যুবকদের থেকে মনােনয়নের মাধ্যমে। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে স্কলারশীপ স্কীম চালু হয়। ফলে মেধাবী যুবকরা ইংল্যান্ডে গিয়ে সিভিল সার্ভিসে অংশ নিতে পারত। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে আচিনসন কমিটি নিয়ােগ করা হয়। সিভিল সার্ভিস সংস্কারের জন্য। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড ও ভারতে একসঙ্গে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে লি- কমিশন গঠিত হয়। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রে পাবলিক সার্ভিস কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে সিভিল সার্ভিসের বয়স ছিল ২৩ বছর, ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ২২ বছর, ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে ২১ বছর ও ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ১৯ বছর। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম উত্তীর্ণ ভারতীয়।
ব্রিটিশ শাসনকালে অর্থ-ব্যবস্থা
১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আয়কর চালু হয়। সম্পদের নির্গমন তত্ত্ব’ (Economic Drain Theory) প্রথম উত্থাপন করেন দাদাভাই নৌরজি। ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে রচিত তার গ্রন্থ ‘Poverty and Un-British Rule in India\’। লর্ড মেয়ে ভারতে প্রথম অর্থনৈতিক সংস্কার চালু করেন। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জন ভূমি রাজস্ব নির্দিষ্ট করে দেন।
ব্রিটিশ শাসনকালে পুলিশি ব্যবস্থা
লর্ড কর্ণওয়ালিশ ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে একজন এস.পি. নিয়ােগ করেন এবং তার সময়ে ভারতে পুলিশ ব্যবস্থা চালু হয়। ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড মিন্টো বিভাগের (Division) জন্য এস.পি. নিয়ােগ করেন যিনি গুপ্তচরদের কাজ দেখাশুনাে করতেন। ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে বােম্বে প্রদেশে পুলিশি ব্যবস্থা চালু হয়। উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এস.পি, পদ বিলােপ করেন এবং সেখানে কমিশনার পদ সৃষ্টি করেন। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে স্টেট বা রাজ্যের প্রধান হিসাবে আই.জি, নিয়ােগ করা হয় এবং ডি.আই.জি. ছিল রেঞ্জের প্রধান এবং এস.পি. ছিল জেলার প্রধান। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বােম্বাইতে ইন্সপেকটর জেনারেল অফ পুলিশ নিয়ােগ করা হয়। লর্ড কার্জন ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে পুলিশ কমিশন নিয়ােগ করেন। এর সভাপতি ছিলেন এন্ডু ফ্রেজার ও স্টিউয়ার্ট ছিলেন সেক্রেটারী।
ব্রিটিশ শাসনকালে সামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা
কোম্পানীর সামরিক কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয় আদ্দিস কাম্বেতে। ১২ বছর চাকরির পরে ক্যাটেন, ২০ বছর পরে মেজর, ২৬ বছর পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও ৩১ বছর পরে তাকে কর্নেল পদে উন্নীত করা হত। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান সেট কর্পস নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে ইম্পিরিয়াল সার্ভিস ট্রপস প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কিসনার কমান্ডার-ইন-চি নির্বাচিত হন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়েলবির নেতৃত্বে রাজকীয় কমিশন (Royal Commission) নিয়ােগ করা হয়। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ন্যাভাল ফোর্স বিলােপ করে তার নাম রাখা হয় রয়্যাল নেভি। মেজর স্টিজার লরেন্স কে বলা হয় ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর জনক’ |
ব্রিটিশ শাসনকালে সামাজিক সংস্কার
কোম্পানি প্রথম থেকে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে ছিল। শ্রীরামপুর মিশনারীরা সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য প্রাণপন চেষ্টা করেন। ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে ৪ নভেম্বর উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর সপ্তদশ আইন বিধি অনুসারে বাংলা প্রেসিডেন্সিতে ফৌজদারী আইনে সতীদাহ প্রথা বেআইনি, শাস্তিযােগ্য বলে গোশিত হয়। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে মাধাঞ্জে সতীদাহ নিষিদ্ধ। হয় । সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করতে উদ্ভোগাযােগ্য ভূমিকা নেন রাজা রামমোহন রায়।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের পক্ষে আন্দোলন করেন। হিন্দু বিধবা পূর্ণবিবাহ আইন পাশ হয়েছিল ২৬ জুলাই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চদশ আইন বিধি অনুসারে। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর তার নিজ পুত্র নারায়ণের সঙ্গে ভবসুন্দরী নামে এক বালিকা বিধবার পুনর্বিবাহ দেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে বম্বেতে বিধবা পুনর্বিবাহ সভা প্রতিষ্ঠা হয়। ধন্দুকেশর কার্ডে পুনাতে উইডোজ হােম (Widow\’s Home) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে বীরেশলিঙ্গ, পাগুলু অন্ধ্রপ্রদেশে ভূইন্ডােজ হােম প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে এল. এল. স্ট্যানহােপ ভারতে দাস প্রথা বিলােপের আবেদন জানান। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনে দাস ব্যবসা বিলােপ করা হয়। ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চম আইন দ্বারা লর্ড এলেনবরাে ভারতে দাস প্রথা বেআইনি করেন। ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় দাস প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল দশ নম্বর রেগুলেশন দ্বারা। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে বিবাহ সম্পত্তি আইন পাশ হয় বি, এম, মালাবারের উদ্যোগে। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে বিবাহ সম্মতি আইন পাশ হয় বি,এম, মালাবারের উদ্যোগে। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে সারদা আইন পাশ হয় রায়সাহেব হরবিলাস সারদার নামে। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ছেলেদের বিবাহ বয়স ১৮ বছর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৫ বছর করা হয়।
১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল রেগুলেশান XXI দ্বারা কন্যাভ্রুণ হত্যা নিষিদ্ধ হয়। ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে ৩ নং রেগুলেশান দ্বারা দ্রুণ হত্যা নিষিদ্ধ হয়। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মানথিভুক্তকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে মিউনিসিপ্যাল আইন পাশ হয় বিভিন্নপ্রদেশে।