বিজয়নগর সাম্রাজ্য | Vijayanagara Empire
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সূচনা
বিজয়নগর সাম্রাজ্য ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ বি-তুঘলকের সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। হরিহর ও বুৰু বিজয়নগর সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। হরিহর ও বুরাই প্রথমে ওয়ারাঙ্গলের কাকতীয় বংশের রাজা দ্বিতীয় প্রতাপ রুদ্রদেবের রাজস্ব আধিকারিক ছিলেন। মুসলমানরা কাকতীয় বংশ উচ্ছেদ করেন। তারপর তারা অর্থাৎ হরিহর ও বুক্ক কাম্পেলিতে কর্মচারী হিসাবে নিযুক্ত হন। কিন্তু মুসলমানরা তাদের ধরে নিয়ে যায় দিল্লীতে এবং ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দেয়। হােয়সল রাজা তৃতীয় বীরবল্লাল তুঙ্গভদ্রার তীরে অনেক দুর্গ পত্তন করেন। হরিহর ও বুক্ক অ্যানেগােন্ডি অধিকার করে বিজয়নগর সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। বিজয়নগর সাম্রাজ্য স্থাপনে তাদের সাহায্য করেন শ্রীঙ্গেরী মঠের সন্ন্যাসী মাধববিদ্যারণ্য ও তার ভাই সায়নাচার্য। তুঘলকরা হরিহর, বুক্ক, কাম্মান, সুদাপ্পা ও মারাগ্লা এই পাঁচভাইকে কারাগার থেকে মুক্তি দিলে মাধববিদ্যারণ্য বা মাধবাচার্য তাদের পুনরায় হিন্দুধর্মে দীক্ষা দেন। বিজয়নগরে ৪টি রাজবংশ রাজত্ব করেন। যথা—সঙ্গম, সালুভ, তুলভ ও আরবিডু।
সঙ্গম বংশ (১৩৩৬—১৪৮৫)
প্রথম হরিহর (১৩৩৬-৫৬)
প্রথম হরিহর ছিলেন বিজয়নগরের প্রথম সম্রাট। তিনি কাকতীয় বংশের অনুসরণে বিজয়নগর সাম্রাজ্যকে স্থল, নাড়ু ও সীমাতে ভাগ করেন। তিনি নতুন রাজধানী বিজয় বা বিদ্যানগর স্থাপন করেন। তার আগে বিজয়নগরের নাম ছিল বিরূপাক্ষ পট্টন। তিনি হােয়সাল রাজা চতুর্থ বল্লালকে ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে পরাস্ত করে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দে হরিহর কদম্ব রাজ্যটি তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বাদামী দুর্গটি শক্তিশালী করে গড়ে তােলেন এবং তার ভাই কাম্পানকে উদয়গিরি দুর্গের শাসক নিযুক্ত করেন। অনন্তরাস চিক্কাউদয় ছিলেন তার প্রধান মন্ত্রী।
প্রথম বুক্ক (১৩৫৬–৭৭)
বুক্ক রায়ের সময় বাহমনি সুলতান মুহম্মদ শাহের সঙ্গে বিজয়নগরের সংঘর্ষের সূত্রপাত। তিনি চিন সম্রাটের কাছে দূত পাঠান। তিনি বেদমার্গ প্রতিষ্ঠাপক’ উপাধি নেন। বুক্ক মাদুরার সুলতান শাহীকে পরাস্ত করে তামিল, কেরল অধিকার করেন। তিনি রাজনারায়ণ শম্ভুরায় সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযান করেন। মাদুরা বিজয় কাব্য রচনা করেন কাস্পনের স্ত্রী গঙ্গাদেবী। সায়নাচার্য ছিলেন তার মন্ত্রী। তেলেগু কবি নানাসােম তার রাজসভায় ছিলেন।
দ্বিতীয় হরিহর (১৩৭৭–১৪০৪)
তিনি মহারাজাধিরাজ’ এবং ‘রাজপরমেশ্বর’ উপাধি নেন। তিনি কাঞ্চি, ত্রিচিনপল্লী, কানাড়া, মহীশূর চিঙ্গলপুট ইত্যাদি নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। তিনি বেলগা ও গােয়া বাহমনিদের কাছ থেকে দখল করেন। এছাড়া তিনি ধাবল ও খুরপতন দখল করেন। লঙ্কার রাজাকে বিজয়নগরে কর পাঠাতে বাধ্য করেন। ফেরিস্তার বিবরণ অনুসারে মুজাহিদ শাহ (বাহমনি সুলতান) তার সাম্রাজ্য আক্রমণ করেন। দ্বিতীয় হরিহরের পর সিংহাসনে বসেন যথাক্রমে বীরুপাক্ষ, দ্বিতীয় বুক্ক এবং প্রথম দেবরায়।
প্রথম দেবরায় (১৪০৬–১৪২২)
ফেরিস্তার মতে ফিরােজ শাহ বাহমনি তাকে পরাস্ত করেন। তিনি ফিরােজশাহকে দশলক্ষ মুদ্রা, বহুমণিমুক্তো ও হাতি দেন। তিনি নিজ কন্যার সঙ্গে ফিরােজ শাহের বিবাহ দেন। ১৪১৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাহমনি সুলতানকে হারিয়ে এই অপমানের প্রতিশােধ নেন। তিনি জলসেচের জন্য তুঙ্গভদ্রায় ও হরিদ্রা নদীতে একটি করে বাঁধ নির্মাণ করেন। তিনি অশ্বারােহী বাহিনীর উপর জোর দেন। হরিবিলাসম’ গ্রন্থের রচয়িতা শ্রীনাথ তার পৃষ্ঠপােষকতা অর্জন করেন। তারপরে সিংহাসনে বসেন বিদ্যারণ কালজন, রামচন্দ্র ও প্রথমবিজয়।
দ্বিতীয় দেবরায় (১৪২২–১৪৪৬)
দ্বিতীয় দেবরায় ছিলেন সঙ্গম বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট। তিনি উড়িষ্যার গজপতি রাজ্য, অন্ধ্রের কন্যাভিদুরাজ্য এবং কেরলরাজ্য তার সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। কালিকটের জামরিন তার অধীনে ছিল। তার দেওয়ান লাক্কানদানিক শিলভ আক্রমণ করেন। তিনি সংস্কৃতে মহানাটক সুনিধি’ গ্রন্থটি লেখেন। দ্বিতীয় দেবরায় মুসলমানদের তার সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের জায়গীর দেন এবং মসজিদ গড়ে তােলার স্বাধীনতা দেন। তিনি ‘গজবেতকর’ উপাধি। নেন। গজবেতকর হল হাতিশিকারী। ইটালীয় পর্যটক নিকোলাে কন্টি ও পারসিক রাষ্ট্রদূত আব্দুর রজ্জাক দ্বিতীয় দেবরায়ের রাজত্বকালে বিজয়নগরে আসেন ১৪২০ খ্রিস্টাব্দে। তারা বিজয়নগরের সমৃদ্ধি ও শক্তির কথা বলেছেন। বাহমনির সুলতান আহমেদ শাহ দ্বিতীয় দেবরায়কে কয়েকবার পরাস্ত করেন।
মল্লিকার্জুন (১৪৪৬—১৪৬৫)
উড়িষ্যার রাজা মল্লিকার্জুনের কাছ থেকে উদয়গিরি ও কোন্ডবিডু অধিকার করেন। মল্লিকার্জুন অবশ্য বাহমনি আক্রমণ প্রতিহত করেন।
দ্বিতীয় বীরুপাক্ষ (১৪৬৫–১৪৮৫)
দ্বিতীয় বীরুপাক্ষ মল্লিকার্জুনের ভাই ছিলেন। পান্ড্য রাজা কাঞ্চী ও বাহমনি সুলতান দ্বিতীয় বীরুপক্ষের কাছ থেকে গােয়া দখল করে নেন। শেষ পর্যন্ত চন্দ্রগিরির সামন্ত নরসিংহ সামন্ত নরসিংহ সালুভ ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে তাকে পরাস্ত ও হত্যা করলে সঙ্গম বংশের পতন ঘটে।
সালুভ বংশ (১৪৮৫–১৪৯০)
নরসিংহ সালুভ
নরসিংহ সালুভ ছিলেন সালুভ গুন্দার পুত্র। মল্লিকার্জুনের কনিষ্ঠ পুত্র রাজশেখর তার রাজপ্রাসাদে আশ্রয় পান। তিনি অন্ধ্র রাজ্য জয় করেন। তার রাজত্বকাল ১৪৮৫-১৪৯০ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যুর পর তার শিশুপুত্র ইম্মদি নরসিংহকে সিংহাসনে বসিয়ে মন্ত্রী নরশ নায়ক কার্যত সকল ক্ষমতা দখল করেন।
নরশ নায়ক (১৪৯০–১৫০৩)
নরশ নায়ক-কে বলা হত রক্ষাকর্তা ও স্বামী। ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয়।
তুলভ বংশ (১৫০৫-১৫৭০)
বীরনরসিংহ (১৫০৫–১৫০৯)
তিনি সালুভ বংশীয় রাজা ইন্মদি নরসিংহকে পরাস্ত করে সিংহাসনে বসেন। পর্তুগীজ সেনাপতি আলমিদার সঙ্গে চুক্তি করার ফলে পর্তুগীজরা আরবের ঘােড়া বিজয়নগরে সরবরাহ করত। তিনি ইউসুফ আদিল শাহের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বিবাহকর রােহিত করেন।
কৃষ্ণদেব রায় (১৫০৯—১৫৩০)
কৃষ্ণদেব রায় ছিলেন বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা। সুলতান মামুদ শাহকে তিনি পরাস্ত করেন। তিনি বিজাপুরের সুলতান ইউসুফ আদিল শাহকে পরাস্ত ও হত্যা করে গুলবর্গা দখল করেন। তিনি উড়িষ্যার গজপতি সম্রাট প্রতাপরুদ্রকে পরাস্ত করে উদয়গিরি ও কোন্ডবিড় দখল করেন। তিনি যবন রাজ্য স্থাপনাচা’ উপাধি ধারণ করেন। তিনি অভিনব ভােজ’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি তেলেগু ভাষায় ‘আমুক্তমাল্যদানামে একটি গ্রন্থ লেখেন। তার রাজসভায় ‘অষ্টদিগগজ’ নামে আটজন সুধী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি রায়চুর দোয়াব অধিকার করেন। তিনি গােলকুন্ডার কুলিকুতব শাহকে পরাক্ত করেন। গােয়ার পর্তুগীজ গভর্নর আলবুকার্ক-এর সঙ্গে তার সন্ধি হয়। কৃষ্ণদেব রায় সংস্কৃতে ‘জাম্ববর্তী কল্যাণম্ নামে একটি গ্রন্থ লেখেন। পেড়েন ছিলেন তার সভাকবি এবং পেড়নকে বলা হয় অন্ধ্র কবিতার পিতামহ। পেল্ডন রচনা করেন ‘মনুচরিত’, ‘হরিকথা সারাংশ’ গ্রন্থ দুটি। পঙ্গলিসুরন রচনা করেন রাঘব পান্ডব বিজয়’এবং ‘প্রভাবরী পদুম্ন’নামে দুটি গ্রন্থ। পান্ডুরঙ্গ মহত্তম গ্রন্থ রচনা করেন তেনালি রামলিঙ্গ। আয়াল্লা রাজু রামভদ্র রচনা করেন ‘শকরামতসর সংগ্রহম’, ‘কলহস্তি সহতম’ গ্রন্থের রচয়িতা ধুরাজ্যোতি। নীতিমান রচনা করেন ‘পারিজাত পােহরাণম’ গ্রন্থ। মাধ্য রচনা করেন রাজশেখর চরিতম। আলবুকার্ক ভাটকল দুর্গ নির্মাণের অনুমতি নেন কৃষ্ণদেব রায়ের কাছ থেকে। তিনি গঙ্গরাজা উমান্ডুর বিদ্রোহ দমন করেন।
কৃষ্ণদেব রায় কৃষ্ণস্বামী, হাজারস্বামী এবং বিঠলস্বামী মন্দির নির্মাণ করেন। তিনি নেগােলপুরা নামে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন তার মা নাগম্বার স্মৃতিতে। তিনি বহু রাজকীয় গােপুর তৈরী করেন। ব্যাসরাজ ছিলেন তাঁর রাজগুরু ও শিক্ষক।
অচ্যুত রায় (১৫৩০–১৫৪২)
রায়চুর দোয়াব তার আমলে হাতছাড়া হয়। ইসমাইল আদিল শাহ রায়চুর দোয়াব দখল করে নেন। তিনি গুজরাটের সুলতান ও গােলকুন্ডার সুলতানকে পরাস্ত করেন। এরপর সিংহাসনে বসেন তার পুত্র প্রথম ভেঙ্কট।
সদাশিব রায় ও রাম রায় (১৫৪৩–১৫৬৫)
সদাশিব রায় ছিলেন খুব দুর্বল সম্রাট। তিনি পর্তুগীজ জে. ডি. ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে সন্ধি করেন। তার দুর্বলতার সুযােগে মন্ত্রী রামরায় সকল ক্ষমতা অধিকার করেন। মন্ত্রী রামরায় দক্ষিণের রাজ্য আক্রমণ করে তাদের উপর বশ্যতামূলক সন্ধি চাপানাের চেষ্টা করেন। রামরায়ের আগ্রাসনে অতিষ্ঠ হয়ে আহম্মদনগর, বিজাপুর, গােলকুন্ডা ও বিদরের সুলতানরা জোট বেঁধে বিজয়নগর আক্রমণ করেন। ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে জানুয়ারী তালিকোটার যুদ্ধে বিজয়নগর বাহিনী ধ্বংস হয়। তালিকোটার অপর নাম ছিল রাক্ষস তঙ্গোড়ি বা বানিহাট্টির যুদ্ধ। এই যুদ্ধে রামরায় নিহত হন এবং মুসলমানরা বিজয়নগরের রাজধানী লুণ্ঠন করেন।
আরবিডু বংশ (১৫৭০–১৬১৪)
রামরায়ের ভাই তিরুমল আরবিডু বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে তার প্রভু সদাশিব রায়কে পদচ্যুত করে। তিরুমল পেনুগােণ্ডায় তার রাজধানী স্থানান্তর করেন।
এরপরে সিংহাসনে বসেন যথাক্রমে প্রথম শ্রীরঙ্গ (১৫৭২৮৫) এবং দ্বিতীয় ভেঙ্কট (১৫৮৬–১৬১৪)। দ্বিতীয় ভেঙ্কট তামায়া ও লিঙ্গম বিদ্রোহ দমন করেন। তার সময় পর্তুগীজরা গােলকুন্ডার অনুমতি নিয়ে নাগাপট্টনম ও মছলিপট্টনমে কারখানা গড়ে তােলেন। জিঞ্জি নায়ক পর্তুগীজ ও ইংরেজদের সেন্ট ফোর্ড ডেভিড ও দেব পত্তনমে ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে কারখানা করার অনুমতি দেন। দ্বিতীয় ভেঙ্কট পুলিকটে কারখানা খােলার এবং খ্রিস্টান মিশনারীদের গির্জা গঠনের অনুমতি দেন। তিনি তার রাজধানী পেনুগগাণ্ডা থেকে চন্দ্রগিরি ও পরে ভেলোের নিয়ে যান। এরপরে সিংহাসনে বসেন যথাক্রমে রামদেব রায়, তৃতীয় ভেঙ্কট এবং তৃতীয় শ্রীরঙ্গ। তৃতীয় শ্রীরঙ্গ ছিলেন আরবিডু বংশের শেষ সম্রাট। মীর জুমলা ও মুস্তাফা খান বিজয়নগর সাম্রাজ্য ধ্বংস করেন।
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শাসনব্যবস্থা
বিজয়নগর সাম্রাজ্য ছিল হিন্দু সামন্ত প্রথা। সামন্ত ভূস্বামীদের বলা হত ‘অমরনায়ক’। রাজাকে বলা হত কার্যকর্তা’। সচিবকে বলা হত “ দিওয়ান খান। মুখ্য সচিব বা প্রধান সচিব হল সর্বনায়ক। হিসাবরক্ষক হল করণিকম।
বিজয়নগরের প্রাদেশিক শাসন
প্রদেশকে বলা হত রাজ্য, মন্ডল, রায়চুর ইত্যাদি। প্রদেশের শাসনকর্তাদের বলা হত নায়ক না নায়েক। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নায়েক হল মাদুরাই (তিরুমলনায়ক), থাঞ্জাভুর, জিঞ্জি, ইক্কেরি (ভেঙ্কটপ্লানায়েক) এবং মহীশূর। প্রাদেশিক শাসনকর্তারা নিজ নিজ অঞ্চলে ছিল মুকুটহীন রাজা। তারা কতদিন নিজ পদে থাকতে পারবেন তার কোন বাঁধাধরা নিয়ম ছিল না। তাদের নিজস্ব দরবার ও সেনাদল ছিল। তারা নিজ নামে ক্ষুদ্রমানের মুদ্রা ছাপাতাে ও প্রাদেশিক কর্মচারীদের নিয়ােগ করত।
বিজনগরের সামরিক প্রশাসন
সামরিক দপ্তরকে বলা হত কান্দাচার। সামরিক দপ্তরের প্রধানকে বলা হত দন্ডনায়েক। সামরিক প্রধানরা যারা কর আদায় করত তাদের বলা হত ‘পলিয়গর’ বা ‘পলিগার। হিন্দু ও মুসলিম সকল শ্রেণীর মানুষদের সামরিক বাহিনীতে নিয়ােগ হত। সামরিক বাহিনীতে রথ বাহিনী ছিল না। বিজয়নগরে চার প্রকারের দুর্গ ছিল যথা স্থলদুর্গ, গিরিদুর্গ, বনদুর্গ, জলদুর্গ।
বিজয়নগরের স্থানীয় প্রশাসন
প্রদেশগুলিকে জেলা বা কোট্টাম বা কুরমে ভাগ করা হত। জেলাগুলিকে নাড়ুতে ভাগ করা হত। নাড়ুগুলি আম্বাদীন মেলগ্রাম (৫০টি গ্রাম) এবং গ্রাম নিয়ে গঠিত হত। ব্রাহ্মণদের গ্রামকে বলা হত চতুর্বেদী মঙ্গলম। প্রতিটি গ্রামে ১২টি করে কার্যকরী দল ছিল। এদের বলা হত ‘আয়াগার ব্যবস্থা। গ্রাম প্রধানের উপাধি ছিল ‘সুব্রহ্মণ্যম আইয়ার। বিজয়নগরের সাহিত্য ও স্থাপত্য : মাইকর রচনা করেন “শিবনানাবােদম” গ্রন্থটি। “শিবনানাসুতিয়ার’ গ্রন্থের রচয়িতা অরুনন্দী। ভেলিআলা তাম্বিরান রচনা করেন নানাবর্ণ বিলক্ষম’ গ্রন্থটি। কালিদাসের ‘শকুন্তলা’ তেলেগু ভাষায় লেখেন বীরভদ্র। পালিঙ্কর ভগবতগীতা মালয়ালাম ভাষায় অনুবাদ করেন। বিজয়নগর স্থাপত্য শিল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল কল্যাণমণ্ডপ, সন্তপ, গর্ভগৃহ, গোপুরম এবং স্থাপত্যখচিত স্তম্ভ। এখানে দ্রাবিড় শিল্প রীতির দেখা মেলে।
বিজয়নগরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
এখানকার গৃহকরকে বলাহত ‘ভাসালপ্রণাম’। নাদাল বুকল, রজথাড়াঙ্কল, গন্ডরায় গাল্ডাকোল ছিল বিভিন্ন প্রকার পরিমাপের কাঠি। জমিদার এবং কৃষকের মধ্যে শস্যভাগ করার ব্যবস্থাকে বলা হত বরং’। মন্দির দান করাকে বলা হত ‘সমান্য। আস্থাবান ছিল রাজস্ব দপ্তর। নগদ করকে বলা হত ‘সিদ্ধায়া’। ফার্নান্দো নুনিজ অচ্যুত দেবরায়ের সময় বিজয়নগর সাম্রাজ্যে আসেন। বারবােসা কৃষ্ণদেবরায়ের সময় বিজয়নগরে আসেন।