ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা | Indian Federal System

ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা | Indian Federal System

ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার (Indian Federal System) তথ্য

1. ভারতীয় সংবিধানের কোথাও ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র বলা হয় নি। সংবিধানের ১নং ধারায় ভারতকে একটি রাজ্যসমূহের ইউনিয়ন হিসাবে ঘােষণা করা হয়েছে। (India, that is Bharat, shall be a Union of States.)

2. ড. বি. আর. আম্বেদকর ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র’ না বলে ইউনিয়ন বলার ব্যাপারে মূলতঃ দুটি যুক্তির অবতারণা করেছেন : (a) অঙ্গরাজ্যগুলির মধ্যে চুক্তির ফলে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় নি এবং (b) চুক্তির ফলে সৃষ্টি হয় নি বলেই কোনাে অঙ্গরাজ্যের ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকার নেই। [The Indian Federation was not the result of an agreement by the states to join in a federation and that the federation not being the result of an agreement, no state has the right to secede. The federation is a union, because it is indestructible.]

3. The Indian Federation is not the result of a compact among preexisting independent states as the American Federation is The Federation of India came into being after the formation of the nation state. The federal units had no independent character of their own in the past. The Founding Fathers of our constitution inherited from the British Raj a highly centralised bureaucratic state but adopted a federal system of government as the most suitable for ethically diverse Indian society. অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাটি স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে চুক্তির মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠেনি। ব্রিটিশ আমাদের একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রই প্রদান করেছিল যেখানে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে কোনাে চুক্তির মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা ছিল না। ভারতীয় সংবিধান প্রণেতাগণ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামােটি গ্রহণ করেছিলেন ভারতবর্ষের ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ধারণাটিকে সফল করে তুলতেই।

4. যুক্তরাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে মূলতঃ দুটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। একটি হল একত্রীকরণ পদ্ধতি (Method of aggregation or integration) এবং অপরটি হল বিভক্তিকরণ পদ্ধতি (Method of disaggregation or disintegration).

5. একত্রীকরণ পদ্ধতিতে কতকগুলি সার্বভৌম রাষ্ট্র তাদের স্বাধীনতা কিছু পরিমাণে বিসর্জন দিয়ে স্বেচ্ছাকৃতভাবে একটি রাষ্ট্রে মিলিত হয়। এইভাবে একটি যুক্তরাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। এই যুক্তরাষ্ট্রকে কতকগুলি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সঙ্গম বলা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই পদ্ধতিতে গড়ে উঠেছে।   অন্যদিকে বিভক্তিকরণ পদ্ধতিতে একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের প্রদেশ বা প্রশাসনিক এলাকাগুলিকে অঙ্গরাজ্যে পরিণত করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামাে গড়ে তােলা হয়। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র গঠনের আগে প্রদেশগুলির কোনাে স্বাধীন সত্তা থাকে না। কানাডার যুক্তরাষ্ট্র এই পদ্ধতিতে গড়ে উঠেছে। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে বিভক্তিকরণ পদ্ধতিরই আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারতবর্ষ শাসন আইনের আগে ভারত ছিল একটি শক্তিশালী এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র।

6. ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন কাঠামাের মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিরােধী। যেমন : (a) ভারতে দ্বৈত শাসনতন্ত্রের নীতি স্বীকার করা হয়নি। ফলে অঙ্গরাজ্যগুলির কোনাে পৃথক সংবিধান নেই। (b) ভারতে দ্বৈত বিচারব্যবস্থার নীতি গ্রহণ করা হয়নি। ফলে সুপ্রীমকোর্ট হল দেশের একমাত্র সর্বোচ্চ আপিল আদালত। (c) ভারতে দ্বৈত নাগরিকতার নীতি স্বীকার করা হয়নি।

7. অধ্যাপক কে. সি. হােয়ার ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ‘আধা যুক্তরাষ্ট্র’ (quasi federal) বলে বর্ণনা করেছেন।

8. যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার একটি অঙ্গ হিসাবে ভারতে ‘আন্তঃরাজ্য পরিষদ’ (Inter State Council) গঠন করা হয়েছে। পরিষদের উদ্দেশ্য হল কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে পারস্পরিক সহযােগিতা ও বিশ্বাস গড়েতােলা।

9. ভারতীয় সংবিধানের ২৬৩নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি জনস্বার্থ সাধনের উদ্দেশ্যে আন্তঃরাজ্য পরিষদ গঠন করতে পারেন। (Article 263 empowers the President to establish an Inter State Council if at any time it appears to him that public interests would be served thereby.)।

10. আন্তঃরাজ্য পরিষদ তিন প্রকার কাজ করে :
(a) রাজ্যসমূহের মধ্যে বিরােধের কারণ অনুসন্ধান করবে ও পরামর্শ CHC (to inquire into and advise upon disputes which may have arisen between states.)।
(b) কেন্দ্র এবং সকল রাজ্যের অথবা সকল বা কয়েকটি রাজ্যের সাধারণ স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়াদি অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করে (to investigate and discuss about subjects in which some or all of the state or the Union and one or more of the state have a common interest, e.g. research in such matters as agriculture, forestry, public health etc.)।
(c) রাজ্যসমূহের নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের দ্বারা আন্তঃরাজ্য সংহতি সাধনের স্বার্থে পন্থা পদ্ধতির সুপারিশ করা (making recommendation for coordination of policy and action relating to such subjects.)।

11. ভারতকে সহযােগী যুক্তরাষ্ট্র (Co-operative Federalism) হিসাবে গড়ে তুলতে আন্তঃরাজ্য পরিষদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

12. ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন আন্তঃরাজ্য পরিষদের ‘পদাধিকার বলে সভাপতি’ (Ex-officio Chairman)

13. কেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পরিষদগুলির (Zonal Councils) ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।   কেন্দ্র, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অর্থাৎ সমগ্র ভারতকে ৬টি আঞ্চলিক বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে একটি করে আঞ্চলিক পরিষদ রয়েছে। প্রধানতঃ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতেই এই পরিষদ গঠন করা হয়, যার মধ্য দিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে পারস্পরিক সহযােগিতা ও নির্ভরশীলতা গড়ে তুলতে পারে।

14. ৬টি আঞ্চলিক পরিষদ হল :
(a) Eastern Zone : Bihar, Orissa, West Bengal, Sikkim.
(b) Western Zone : Gujarat, Maharastra, Goa, Damanand Diu, Dadra and Nagar Haveli.
(c) Northern Zone : Punjab, Haryana, Himachal Pradesh, Jharkhanda, Rajasthan, Delhi and Chandigarh 
(d) Southern Zone : Andhra Pradesh, Kerala, Karnataka, Tamil Nadu, Pandicherry.
(e) Central Zone : Uttar Pradesh and Madhya Pradesh.
(f) North-Eastern Zone Assam, Meghalaya, Nagaland, Manipur, Tripura, Mizoram, Arunachal Pradesh.

15. আঞ্চলিক পরিষদের কোনাে উল্লেখ ভারতীয় সংবিধানের কোনাে অংশেই করা হয়নি। তবে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের রাজ্য পুনর্গঠন আইনের (States Reorganisation Act, 1956) মাধ্যমে আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হয়।

16. কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী (The Union Home Minister) হলেন প্রতিটি আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান।

17. অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে সাধারণ কার্য সম্পর্কিত কোনাে বিষয়ে সমস্যার সৃষ্টি হলে আঞ্চলিক পরিষদ সে ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করে।

18. জাতীয় উন্নয়ন পরিষদ (National Development Council) গঠনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে দেশের অথনৈতিক পরিকল্পনাকে যৌথভাবে গড়ে তােলার প্রচেষ্টাটি গৃহীত হয়। উক্ত পরিষদ ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়। উল্লেখ্য জাতীয় উন্নয়ন পরিষদও হল একটি সংবিধান বহির্ভূত সংস্থা’ (Extra-Constitutional body)। পরিষদের প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীগণ এর সদস্য হিসাবে গণ্য হন। সেই সঙ্গে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রশাসকগণ ও পরিষদের সদস্য বিবেচিত হন। জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের প্রধান কাজ হল—পরিকল্পনা কমিশনের সিদ্ধান্তগুলিকে কার্যকর করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও সেই সঙ্গে জাতীয় পরিকল্পনাকে প্রয়ােজন অনুসারে নিয়ন্ত্রণ করা এবং জাতীয় পরিকল্পনা কিভাবে তার লক্ষ্যকে পূরণ করবে সে সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করা।

Leave a Comment

Scroll to Top