মুঘল সাম্রাজ্যের পতন এবং পরবর্তী মুঘল শাসকগণ (১৭০৭- ১৮৫৭) || Fall of Mughal Dynasty and Post Mughal Emperors (1707-1857)
Post Mughal Emperors (1707-1857)
বাহাদুর শাহ (১৭০৭-১৭১২) : ঔরঙ্গজেবের তিন পুত্র মুয়াজ্জম, আজম ও কামবক্স-এর মধ্যে মুয়াজ্জম \’বাহাদুরি শাহ\’ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে। আজম নিজেকে সম্রাট হিসাবে ঘােষণা করলে চিন কিলিজ খান, গাজিউদ্দিন খান ও মহম্মদ আমিন খান আজমের বিরােধিতা করেন। কামবক্স ‘দিনপনাহা\’ উপাধি নিয়ে আসান খানকে মীরবঙ্গী ও তাকরাব খানকে উজীর পদে নিয়োগ করেন। বাহাদুর শাহ তার ভাইদের পরাস্ত করে প্রথম শাহ আলম’ উপাধি নেন। ঐতিহাসিক কাফী খাঁ তাঁকে \’শাহ-ই-বেখবর’ উপাধি দেন। তিনি শাহুকে ছেড়ে দেন এবং মারওয়াড়ের অজিত সিংকে রাজা হিসাবে মেনে নেন। তিনি জিজিয়া কর তুলে দেন এবং মেবারের স্বাধীনতা স্বীকার করেন।
জাহানদার শাহ (১৭১২-১৭১৩) : বাহাদুর শাহের ৪ পুত্রের মধ্যে জাহানদার শাহ অন্য ভাইদের হারিয়ে ১৭১২ সিংহাসনে বসেন। লাল কানুয়া নামে এক মহিলাকে তিনি ভালবাসতেন। ক্ষমতা পেতে তাকে সাহায্য করেছিল জুলফিকার খান এবং সাবা চাঁদ। জুলফিকার খান নতুন রাজস্ব ব্যবস্থা ইজারা বা জায়গীরদার প্রবর্তন করেন।
ফারুকশিয়র (১৭১৩-১৭১৯) : জাহানদার শাহকে পরাস্ত ও হত্যা করে ফারুখশিয়র সিংহাসনে বসেন। ফারুকশিয়রের সমর্থক এলাহাবাদের সৈয়দ আবদুল্লা আলি এবং পাটনার সৈয়দ হুসেন আলিকে যথাক্রমে উজীর ও মীরবক্সী পদে নিয়ােগ করেন। শিখ নেতা বান্দা বাহাদুরকে ১৭১৬ খ্রিস্টাব্দে ফারুখশিয়র মৃত্যুদন্ড দেন। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ দুত সুরম্যানকে ফারুখশিয়র বিনা শুল্কে বাণিজ্যের ফরমান দেন। হুসেন আলি পেশােয়া বালাজি বিশ্বনাথের সঙ্গে সন্ধি করেন এবং মারাঠাদের সহযােগিতায় সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় ফারুখশিয়রকে হত্যা করে সিংহাসনে বসান রফি-উদ-দর জাতকে ১৭১৯ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে এবং জুন মাসে রফি-উদ-দৌলাকে সিংহাসনে বসান। রফি-উদ-দৌলা ‘দ্বিতীয় শাহজাহান’ উপাধি নেন। সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় জিজিয়া ও তীর্থকর সম্পূর্ণভাবে তুলে দেন। কানুয়ার খানের রচনা থেকে সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় ও ফারুখশিয়র সম্পর্কে জানা যায়। ফারুখশিয়র জুলফিকার খানকে হত্যা করেন।
মহম্মদ শাহ (১৭১৯-১৭৪৮) : সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের সহযােগিতায় মহম্মদ শাহ সিংহাসনে বসেন এবং ১৭২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়কে হত্যা করেন। মহম্মদ শাহের নাম ছিল রােশন আখতার। তিনি কথক নৃত্য ও সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলন। তার নাম ছিল ‘রঙ্গীনা বাদশা\’। তার সময় হায়দরাবাদের নিজাম বংশ, মুর্শিদকুলি খাঁর নেতৃত্বে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা স্বাধীন হয়। ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করেন। নাদির শাহ কোহিনুর হীরা, ময়ূর সিংহাসন, ৬০ লক্ষ টাকা, ১০০০ স্বর্ণমুদ্রা ও ৫০ কোটি টাকার অলঙ্কার নিয়ে যান। ১৭৩৫ খ্রিস্টাব্দে গুজরাট ও ১৭৪১ খ্রিস্টাব্দে মালব মুঘলদের হাতছাড়া হয়।
আহম্মদ শাহ (১৭৪৮-১৭৫৪) : আফগানিস্তানের শাসক আহম্মদ শাহ আবদালী তার সময় ভারত আক্রমণ করেন। তার মা ছিল উধম বাঈ। উধম বাঈ ছিলেন মহম্মদ শাহের নর্তকী। আহম্মদ শাহ উধম বাঈকে \’কিবলাইয়া আলম\’ উপাধি দেন। ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে মলহার রাও হােলকার দিল্লী আক্রমণ করেন। আহম্মদের উজির ইমাদ-উল-মুলক আহম্মদকে অন্ধ করে দেন এবং আলমগীরকে সিংহাসনে বসান।
দ্বিতীয় আলমগীর (১৭৫৪-১৭৫৯) : আজিজুদ্দিন \’দ্বিতীয় আলমগীর’ নামে সিংহাসনে বসেন। ইমাদুল মুলক-এর সেনাপতি বলবাস খানকে হত্যা করলে ইমাদুল মুলক দ্বিতীয় আলমগীরকে হত্যা করেন এবং তার পুত্র দ্বিতীয় শাহআলমকে সিংহাসনে বসান।
দ্বিতীয় শাহআলম (১৭৫৯-১৮০৬) : যুবরাজ আলি গহর ‘দ্বিতীয় শাহ আলম’ উপাধি নেন। তিনি ছিলেন তুর্কী, আরবী, ফার্সী ও হিন্দী ভাষায় পণ্ডিত। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধে তিনি পরাস্ত হন। ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা দিল্লী অধিকার করে।
দ্বিতীয় আকবর (১৮০৬-১৮৩৭) : দ্বিতীয় আকবর রামমােহন রায়কে ‘রাজা’ উপাধি দিয়ে ইংল্যান্ডে পাঠান। দ্বিতীয় আকবর ইংল্যান্ডের রাজার কাছে চিঠি লেখেন মুঘল সম্রাটের ভাতা বৃদ্ধির জন্য।
দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ (১৮৩৭-১৮৬২) : ইনি ছিলেন শেষ মুঘল সম্রাট। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পর তাকে রেঙ্গুনে নির্বাসন দেওয়া হয় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে। সেখানে তিনি ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে মারা যান। মুঘল যুগে ভারতীয় মুসলমানদের শেখজাদা বলা হত। মুঘল দরবারে তিনটি গােষ্ঠী ছিল। যথা ইরানী, তুরানী ও হিন্দুস্থানী। ইরানী গােষ্ঠীর নেতা জুলফিকার খাঁ, আশাদ খাঁ, তুরানি গােষ্ঠীর নেতা ছিলেন হাজিউদ্দিন ফিরােজ জঙ, আমিন খান ও চিন কিলিজখান এবং হিন্দুস্থানী গােষ্ঠীর নেতা ছিলেন সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় ও খান-ই-দাউরান।